নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, এবারও প্রার্থীরা ভোটের প্রচারে ব্যয় করতে পারবেন সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। এই হিসাবে সবচেয়ে কম ভোটারের আসনে প্রার্থীরা ভোটার প্রতি ব্যয় করতে পারবেন প্রায় ১৪ টাকা। আবার সবচেয়ে বেশি ভোটারের এলাকায় প্রার্থী ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থী প্রতি মাত্র ৩ টাকা।
তবে ৩০০ আসনের মধ্যে ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের হিসাব বিবেচনায় এবারও ভোটার প্রতি গড়ে ৮ টাকা ব্যয় করার সুযোগ রাখছে ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসন প্রতি গড় ভোটার ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩০১ জন। প্রার্থীদের জন্য ভোটার প্রতি সর্বোচ্চ ৮ টাকা ব্যয়ের সুযোগ রাখা হলে সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা গড়ে ২৫ লাখ টাকার মধ্যেই থাকবে।
তবে ভোটার সংখ্যা যা-ই থাকুক না কেন, প্রার্থীর ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকার মধ্যেই থাকতে হবে। নিবন্ধিত দলের প্রার্থী হলে দলের অনুদানও এর মধ্যে যুক্ত হবে।
নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীর এজেন্ট ওই টাকা খরচ করতে পারবেন। এছাড়া প্রার্থীর কাছ থেকে লিখিতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কেউ মনোহরী দ্রব্য, ডাকটিকেট কেনা, টেলিফোন বিল ও অন্যান্য ছোটখাটো খাতে অর্থ ব্যয় করতে পারবেন।
অবশ্য ভোটের মাঠে আসলে কত টাকা খরচ হচ্ছে তা নিরূপণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রার্থীরা বাস্তবে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করেন, যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন শুধু ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েই খালাস। প্রকৃত ব্যয় কত হচ্ছে তা তদারকির সঠিক কর্মপন্থা ইসি রাখেনি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান লোকবল সঙ্কটের মধ্যেও এবার ‘ব্যয় মনিটরিংয়ে’ তৎপর হওয়ার কথা বলেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “৩০০ আসনের ভোটারভিত্তিক তালিকা মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। গড়ে ভোটার প্রতি ব্যয়সীমায় গতবারের চেয়ে তেমন কোনো হেরফের হয়নি। সেই সঙ্গে ব্যয় তদারকিতে আইন-বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা থাকবে।”
৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার আগে এ মাসের শেষ সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাত করার কথা রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পরই আসনভিত্তিক সংখ্যা উল্লেখ করে ভোটার পিছু ব্যয় নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
নবম সংসদ নির্বাচনের সময় প্রার্থীর ব্যয়সীমা ছিল ১৫ লাখ টাকা। সে সময় ৮ কোটি ১০ লাখ ভোটারের বিপরীতে প্রতি আসনে এ নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। আর ভোটার প্রতি ব্যয়সীমা ছিল গড়ে ৫ টাকা।
আর দশম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যয়সীমা বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়। তখন ভোটার ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ। এই হিসাব ধরে নির্বাচন কমিশন ভোটার পিছু ব্যয়সীমা দিয়েছিল ৮ টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি যে তালিকা চূড়ান্ত করেছে, তাতে দেশের মোট ভোটার এখন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন; নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন।
আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- দুটি আসনে ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৭ লাখের কাছাকাছি; দুটি আসনে ৬ লাখের বেশি; অন্তত আটটি আসনে ৫ থেকে ৬ লাখ ভোটার রয়েছে।
চারটি আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখের কম। ৩ থেকে ৪ লাখ ভোটার রয়েছে দেড় শতাধিক আসনে। বাকি আসনগুলোতে ৪ থেকে ৬ লাখ ভোটার রয়েছে।
ঝালকাঠী-১ আসনে সবচেয়ে কম ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৫ জন ভোটার। আর সবচেয়ে বেশি ভোটারের আসন ঢাকা-১৯ এ ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩০১ জন; যা ঝালকাঠি-১ এর চারগুণের বেশি।
ভোটার তালিকায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটার রয়েছে গাজীপুর-২ আসনে। এখানে ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪১ জন।
ছয় লাখের বেশি ভোটার রয়েছে গাজীপুর-১ (৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫৪) ও নারায়ণগঞ্জ-৪ (৬ লাখ ৫১ হাজার ১২৩) আসনে।
পাঁচ লাখের বেশি ভোটার রয়েছে- যশোর-৩ (৫ লাখ ২২ হাজার ৫৬১), ময়মনসিংহ-৪ (৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৬), ঢাকা-১৮ (৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৩), সিলেট-১ (৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (৫ লাখ ১৫ হাজার ১১জন), কুমিল্লা-১০ (৫ লাখ ১৬ হাজার ৩৯৪), নোয়াখালী-৪ (৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩২৯) ও চট্টগ্রাম- ১১ (৫ লাখ ৭ হাজার ৩৫৫) আসনে।