অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এই রায়ের পর তিনি ‘স্বস্তিবোধ’ করছেন, তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ হত্যাকাণ্ডের ‘হোতা’ হয়ে থাকলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিৎ ছিল বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এই মামলার রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
আর খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এছাড়া এ মামলার আসামি ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আজকের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
শেখ হাসিনাকে হত্যা করে দলকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এই হামলা হয়েছিল এবং তাতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলে এ মামলার রায়ে উঠে আসে।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার প্রধান কৌঁসুলী সৈয়দ রেজাউর রহমান রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন,“একুশে অগাস্টের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় ১৯ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ অংশটুকুর জন্য আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। তবে যাদেরকে যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।"
এই আইনজীবী বলেন, তারেক রহমান, মুফতি হান্নান, মাওলানা তাজউদ্দিন,আবদুস সালাম পিন্টু একত্রিত হয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আদালত ১২টি পয়েন্ট আলোচনা করে ১৯জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
“সেখানে হাওয়া ভবনের কথা এসেছে। এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে একত্রিত হয়ে তারেক রহমান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে অপরাধীদের আইনে সোপর্দ না করে তাদেরকে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে কাজে লাগিয়েছিলেন।”
বিকালে সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে এ রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিচারের ইতিহাসে আজকে একটি মাইল ফলক সূচিত হল। যে মামলাটিকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য নানারকম ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। জজ মিয়া নামক এক নিরপরাধ লোককে সাজানো হয়েছিল আসামি। সে পর্যায় থেকে মামলাটি আলোর মুখ দেখেছে এবং অপরাধীরা সাজা পেয়েছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে, বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটি বড় সার্থকতা।”
একুশে আগস্টের ঘটনাকে ভারতের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করেন মাহবুবে আলম।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এই মামলাটিতে প্রমাণ হল, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কতখানি ভয়ঙ্কর হতে পারে! রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনাকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিচার যেটা হয়েছে, তাতে প্রাথমিকভাবে আমি স্বস্তি ফিল করছি। তবে রায় দেখার পরে যদি মনে করি যে কোনো আসামির ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়নি, সেক্ষেত্রে আমরা আপিল করব।”
পাকিস্তানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ টেনে মাহবুবে আলম বলেন, “জুলফিকার আলী ভুট্টোর ফাঁসি হয়েছে। তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে তিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ মামলাতেরও কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল।
“কাজেই এখানে যাদের ফাঁসি হয়েছে, তাতে আমরা স্বস্তি অনুভব করছি। তবে আরও কারো কারো ফাঁসি দেওয়া উচিৎ ছিল কিনা সেটা আমি খতিয়ে দেখব।”