২১ অগাস্ট মামলা: পলাতকরা কোথায়?

বহুল আলোচিত ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় পলাতক ১৮ আসামির কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2018, 04:40 PM
Updated : 10 Oct 2018, 03:22 PM

এই ১৮ জনের মধ্যে বর্তমানে তিনজনের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিস রয়েছে। তারেক রহমান এবং বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নামে রেড নোটিস আগে থাকলেও তা সরিয়ে নিয়েছে ইন্টারপোল।

বাকিদের বিষয়ে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো আবেদনই পাঠানো হয়নি ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোতে (এনসিবি)।

গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার এই মামলায় বিচারিক আদালতে রায়ের আগের দিন মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে এই তথ্য পাওয়া যায়।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হয়েছিল গ্রেনেড হামলা; তাতে ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন। প্রাণে বেঁচে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় শেখ হাসিনার শ্রবণশক্তি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিতের চেষ্টার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জঙ্গিনেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। 

দুই বছর পর ২০০৯ সালে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ হলে আরও দুই বছর সময় নিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন সিআইডি কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকসহ ৩০ জন আসামির তালিকায় যোগ হন। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। এর মধ্যে জামায়াত নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান ও বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় আসামি এখন ৪৯ জন।

আসামিদের মধ্যে ৩১ জন এখন কারাগারে রয়েছেন; পলাতক আছেন ১৮ জন।

হারিছ চৌধুরী ও শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ

তারেক ছাড়া পলাতক আসামিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, কুমিল্লার মুরাদনগুরে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন আহমদ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাইদ হাসান, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক উপ কমিশনার ওবায়দুর রহমান খান, মো. ইকবাল, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গির আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ বাবু।

তারেক রহমান এক দশক ধরেই যুক্তরাজ্যে রয়েছেন সপরিবারে। তাকে ফেরত আনতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বিভিন্ন সময়ে সরকার বলেছে।

মামলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।

হারিছ চৌধুরী ও মাওলানা তাজউদ্দিনের ছবিসহ রেড নোটিস রয়েছে ইন্টারপোলে। রাতুলের নাম থাকলেও ছবি নেই।

এনসিবির সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিআইডির পক্ষ থেকে পাঁচজনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। তারা হলেন তারেক রহমান, কায়কোবাদ, হারিছ চৌধুরী, মাওলানা তাজউদ্দিন ও রাতুল বাবু।

তারেক রহমানের রেড নোটিস জারি হয় ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, কায়কোবাদের একই বছরের ১২ নভেম্বর। তাজউদ্দিনের রেড নোটিস জারি হয় ২০০৮ সালের ৫ ফ্রেবুয়ারি, হারিছ চৌধুরীর ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর এবং রাতুলের নোটিস জারি হয় ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। 

তারেক রহমানও আছেন পলাতক আসামির তালিকায়

মহিউল বলেন, “পরবর্তীতে তারেক রহমান এবং কায়কোবাদের নাম রেড নোটিস থেকে তুলে ফেলা হয়। তারা ইন্টারপোলকে বুঝিয়েছে যে এটা রাজনৈতিক ঘটনা।”

তবে নোটিসে নাম তুলতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান তিনি।

যাদের নাম তালিকায় রয়েছে, তাদের অবস্থান সম্পর্কে এআইজি বলেন, “আমরা ধারণা করছি তাজউদ্দিন সাউথ আফ্রিকা অথবা পাকিস্তানে, হারিছ চৌধুরী মালয়েশিয়া, আমেরিকা অথবা লন্ডনে ঘুরে ফিরে অবস্থান করছেন। রাতুল রয়েছে সাউথ অফ্রিকায়।”

পলাতক অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই এনসিবিতে। মহিউল বলেন, “সিআিইডি থেকে যাদের নাম পাঠানো হয়েছে, তাদের বিষয়েই আমরা শুধু কথা বলতে পারি।”

মামলার তদন্তকারী সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি কাহার আকন্দ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে সব আসামি পলাতক, তাদের মধ্যে যারা বিদেশে রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তাদের ব্যাপারেই এনসিবিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

বাকিদের কোনো তথ্য না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “তবে তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জানামাত্রই সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে গ্রেপ্তারের সাহায্য নেওয়া হবে।”

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পলাতকরা দেশের বাইরে রয়েছেন, এটা নিশ্চিত। কিন্তু কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কিছু ধারণা থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

মোহাম্মদ হানিফ ও মাওলানা তাজউদ্দিন

কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে, হানিফ থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়ায়, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে ও সাইফুল জোয়ারদার কানাডায়, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান ও খান সাঈদ হাসান পাকিস্তান অথবা মালয়েশিয়ায়, জঙ্গি আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে রয়েছে বলে কর্মকর্তাদের ধারণা।

কাহার আকন্দ বলেন, রায় ঘোষণার পলাতকদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।

মামলায় হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদ, হানিফ, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল বাবু, মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড।

মামলায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে সাত বছর কারাদণ্ড। তাদের মধ্যে রয়েছেন ওবায়দুর রহমান, খান সাইদ হাসান, সাইফুল জোয়ারদার, এটিএম আমিন।