হাই কোর্টে জামিন পেলেন চবি শিক্ষক মাইদুল

ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কটূক্তির’ অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক  মাইদুল ইসলামকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Oct 2018, 12:36 PM
Updated : 9 Oct 2018, 12:36 PM

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়।

সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুলের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্সেদ।

আদেশের পর আইনজীবী কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাই কোর্ট মাইদুল ইসলামকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে।

চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সার সোমবার মাইদুলকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

হাই কোর্টে জামিন হওয়ায় রিমান্ড বাতিল হবে কি না জানতে চাইলে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “উচ্চ আদালত যেহেতু তাকে জামিন দিয়েছে, তাই রিমান্ড বাতিল হওয়ারই কথা। আমরা হাই কোর্টের জামিনের কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট আদালতে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করতে বলেছি।”

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্সেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাইদুল ইসলামকে আদালত ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন। তবে তার রিমান্ড বাতিল করেননি।”

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ করে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ জুলাই মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাটহাজারি থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখারুল ইসলাম।

কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ায় মাইদুল ইসলাম এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।

তাদের চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেন।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ‘হুমকির’ কারণে ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টরের কাছে আবেদন করেছিলেন শিক্ষক মাইদুল ইসলাম। ওই অবস্থায় গত ৬ অগাস্ট হাই কোর্ট থেকে তিনি আগাম জামিন নেন।

হাই কোর্টের দেওয়া আট সপ্তাহের জামিন শেষে ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন মাইদুল ইসলাম। আদালত তা নাকচ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

মৌন মিছিল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে ‘হয়রানিমূলক’ মামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার মৌন মিছিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক।

‘নিপীড়ন বিরোধী ও স্বাধীন শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান ঘুরে আবার অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশে মিলিত হন তারা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, গীতিআরা নাসরীন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল করিম, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, বাংলা বিভাগের মুহম্মদ আজম, অর্থনীতি বিভাগের রুশাদ ফরিদী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার আব্দুর রাজ্জাক খান, কাজলী শেহরীন ইসলাম, মার্জিয়া রহমানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন শিক্ষক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, "মানুষের মত প্রকাশের সুযোগ না দিয়ে শুধু শুধু উন্নয়নের ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কোনো লাভ নেই। মাইদুল ইসলামসহ যে সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধে  হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে তাদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। শিক্ষক মাইদুলকে সম্মানের সাথে চাকরিতে ফিরিয়ে নিতে হবে।"

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সমালোচনা করে শিক্ষক জিএস হাবিব বলেন, "সংগঠন নিজের স্বার্থে কাজ করছে। একজন শিক্ষক কারাগারে আছে, এটা খুবই লজ্জার বিষয়। মাইদুল ছিলেন সত্যের পক্ষে, তাই আমরা তার সাথে আছি।"

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন বলেন, "গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। এখন সময় এসেছে মুখ খোলার। সমালোচনা থেকে ভালোটুকু নিয়ে, খারাপটা বর্জন করতে হবে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন বলেন, "কথা বলতে পারাটা আমাদের অধিকার, আমরা এই অধিকার অর্জন করেছি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।"

সমাবেশের সঞ্চালক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক উচ্চ আদালতেকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "নিম্ন আদালত মাইদুল হককে রিমান্ডে পাঠালেও উচ্চ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছে। আমরা এ বিষয়ে ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভা করব।"