ইয়াবার জন্য মৃত্যুদণ্ডের সাজা রেখে আইন আসছে

গত কয়েক বছর ধরে সারাদেশে ভয়ঙ্কর মাত্রায় ছড়িয়ে পড়া নেশার বড়ি ইয়াবার উৎপাদন, পরিবহন, বিপণনের জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2018, 09:47 AM
Updated : 9 Oct 2018, 04:27 AM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ নীতিগত অনুমোদন পায়।

পরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “সব ধরনের মাদককে নতুন আইনে যুক্ত করা হয়েছে। ইয়াবা, সিসা বার ও ডোপ টেস্টের মত বিষয়গুলোও আইনে যুক্ত করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ইয়াবা ৫ গ্রামের কম হলে এক থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন আইনের খসড়ায়। এক্ষত্রে অর্থদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।

আর ইয়াবার পরিমাণ ৫ গ্রামের বেশি হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড দিতে পারবে আদালত, এক্ষেত্রেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।

বর্তমান আইনে হেরোইন, কোকেন ও কোকা থেকে তৈরি মাদক, মরফিন, টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল, অপিয়াম, ক্যানাবিস রেসিন, মেথাডন জাতীয় মাদকের জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আর অ্যামফিটামিনযুক্ত যে কোনো মাদককে ‘খ’ শ্রেণির মাদক হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ৫ গ্রাম পর্যন্ত মাদকের জন্য ছয় মাস থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং তার বেশি ওজনের মাদকের জন্য পাঁচ বছর থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বর্তমান আইনে। 

মেথঅ্যামফিটামিন জাতীয় মাদক ইয়াবা এই শ্রেণিতে পড়ে বলে এতদিন ওই শাস্তিই প্রযোজ্য হত।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে, প্রতিটি ইয়াবায় মোটামুটি ০.১ গ্রাম বা তার কম অ্যামফিটামিন থাকে। সেই হিসাবে ৫ গ্রাম অ্যামফিটামিনের জন্য ৫০-৫৫টি ইয়াবা লাগে। বর্তমান আইনে ৫৫টি ইয়াবার জন্য যেমন ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে, লাখ লাখ ইয়াবার চালান ধরা পড়লেও শাস্তি থাকে একই। নতুন আইনে তা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার কথা বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়েছিল ১৯৯০ সালে, যা পরে এক দফা সংশোধন করা হয়েছিল। নতুন আইনে এটাকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পুর্নবিন্যাস করা হয়েছে।

“সিঙ্গেল কনভেনশন অন নারকোটিকস ড্রাগস-১৯৬১, ইউএন কনভেনশন অন সাইকোট্রপিক সাবস্টেনসেস-১৯৭১ এবং ইউএন কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবসটেন্সেস-১৯১৮ এগুলোতে বাংলাদেশ সই করেছে। তাদের দাবির আলোকে আইন হালনাগাদ করা হচ্ছে।”

বর্তমান আইনে অনেক বিষয় সরাসরি স্পষ্ট করা নেই জানিয়ে শফিউল বলেন, “যেমন ইয়াবা আইনে ছিল না। ঢাকা শহরে বা দেশের অনেক জায়গায় সিসা বার আছে, এটারও আইনগত সুযোগ নেই। এগুলো আইনে নিয়ে আসা হয়েছে, ডোপ টেস্টও নতুন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।”

সব ধরনের মাদককে নতুন আইনে যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এমন কোনো বিষয় নেই যা (আইনে) কভার করবে না, কোনো না কোনোভাবে তালিকার মধ্যে চলে আসবে।”

শফিউল বলেন, ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিক কন্ট্রোল বোর্ডের নির্দেশনা অনুসরণ করে ‘কন্ট্রোল-ডেলিভারি’ প্রভিশন নতুনভাবে খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে। বিয়ারের সংজ্ঞা হালনাগাদ করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “এই আইনের তফসিলে উল্লিখিত কোনো দ্রব্য এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা মাদকদ্রব্য বলে ঘোষিত অন্য কোনো দ্রব্য যা সংশ্লিষ্ট তফসিলের অংশ বলে গণ্য হবে। মাদকদ্রব্যের সঙ্গে অন্য যে কোনো দ্রব্য মিশ্রিত বা একীভূত দ্রব্য সমুদয় পণ্য মাদকদ্রব্য বলে গণ্য হবে।”

মাদকের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, স্থানান্তর, আমদানি, রপ্তানি, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, অর্পণ, গ্রহণ, প্রেরণ, লেনদেন, নিলামকরণ, ধারণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, সেবন, প্রয়োগ, ব্যবহারকে এ আইনে অপরাধ গণ্য করা হবে।

খসড়ায় মাদকাসক্তের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শারীরিক বা মানসিকভাবে মাদকদ্রব্যের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি অভ্যাসবশে মাদকদ্রব্য গ্রহণ বা সেবনকারী ব্যক্তি।

প্রস্তাবিত আইনে সিসার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের ভেষজ নির্যাস সহযোগে দশমিক ২ শতাংশের ঊর্ধ্বে নিকোটিন এবং এসএস ক্যানেল মিশ্রিত উপাদান।

শফিউল বলেন, “কেউ যদি বার চালাতে চায় তার লাইসেন্স লাগবে। লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ বার চালালে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

“মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ডোপ টেস্ট করা যাবে। টেস্ট পজিটিভ হলে কমপক্ষে ছয় মাস ও সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হবে।

“কোনো ব্যক্তি, কোনো প্রতিষ্ঠান এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটনে অর্থ বিনিয়োগ ও সরবরাহ করলে, মদদ দিলে বা পৃষ্ঠপোষকতা করলে তার সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড।”

এছাড়া কোনো ব্যক্তি এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে কাউকে প্ররোচনা দিলে, সাহায্য করলে বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে তাকেও সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে।