সিনহার অর্থ কেলেঙ্কারির ‘প্রমাণ পেয়েছে’ দুদক

ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের ঘটনায় জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2018, 01:13 PM
Updated : 29 Jan 2019, 01:08 PM

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বৃহস্পতিবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের দুটি একাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে মোহাম্মদ শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা নামে দুই কথিত ব্যবসায়ী চার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন। সেই টাকা অন্য আরেক ব্যবসায়ী হয়ে বিচারপতি সিনহার বাড়ি বিক্রি বাবদ তার ব্যাংক হিসাবে ঢোকে বলে অভিযোগ পাওয়ার পর তার তদন্তে নামে দুদক।

দুদক প্রথম থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি‘র আড়ালে বিচারপতি সিনহার নাম উহ্য রাখলেও দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর কথিত ওই দুই ব্যবসায়ীর আইনজীবী বিচারপতি সিনহার সঙ্গে লেনদেনের কথাই বলেন।

ক্ষমতাসীনদের রোষের মুখে এক বছর আগে বিদেশে গিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেওয়া বিচারপতি সিনহার লেখা বই সম্প্রতি প্রকাশ হওয়ার পর তাকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে।

এর মধ্যেই বিচারপতি সিনহার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরুর কথা জানায় দুদক। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে সাবেক এই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “ফারমার্স ব্যাংকের দুটি একাউন্ট থেকে চার কোটি টাকা ঋণের ব্যাপারে আমরা তদন্ত করেছি।  তদন্ত শেষ হয়ে গেছে। অনেকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বা চিহ্নিত করা হয়েছে।

“ঋণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করছি।”

তদন্তে পাওয়া বিষয়বস্তু তুলে ধরে তিনি বলেন, “দুটি একাউন্ট থেকে ঋণ প্রক্রিয়া এবং এই  টাকা মানি লন্ডারিং বা বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, নগদ উত্তোলন এসব বিষয়ে অনেক কিছু এসেছে।"

শাহজাহান ও নিরঞ্জনের আইনজীবী আফাজ মাহমুদ রুবেল এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের পাঁচ কাঠা জমির উপর ৫১ নম্বরের ছয়তলা বাড়িটি বিচারপতি সিনহা ছয় কোটি টাকায় বিক্রি করেন টাঙ্গাইলের বাসিন্দা রনজিত চন্দ্র সাহার স্ত্রী শান্ত্রী রায়ের কাছে।

আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের মে মাসে বায়নার সময় বিচারপতি সিনহাকে দুই কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর ৮ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাকি চার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়।

সেই ৮ নভেম্বরই নিরঞ্জন ও শাহজাহান ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে পাওয়া ঋণের দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ফারমার্স ব্যাংক থেকে তোলেন। সেদিনই তারা ওই টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিচারপতি সিনহার ব্যাংক হিসাবে জমা দেন।

নিরঞ্জন সাহা শান্ত্রী রায়ের স্বামী রনজিতের চাচা; আর শাহজাহান রনজিতের বন্ধু। তাদের সবার বাড়ি টাঙ্গাইলে।

গত ৬ মে নিরঞ্জন ও শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ২৬ সেপ্টেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হকসহপাঁচ কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

ঋণ অনিয়মের সঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি জড়িত কি না- এ প্রশ্নে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থাকুক, আর যেই থাকুক। যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বা যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নেব।”

ইকবাল মাহমুদ (ফাইল ছবি)

আগের মতো এদিনও বিচারপতি সিনহার নাম উল্লেখ করেননি সাবেক আমলা ইকবাল মাহমুদ। আগেও তিনি নাম নিয়ে চাপাচাপি করে তাকে বিব্রত না করতে সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন।

দুদকের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “যা হয়, তাই হবে। যদি অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিলের পর ক্ষমতাসীনদের রোষের মুখে থাকা বিচারপতি সিনহা গত বছরের অক্টোবরে ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর সেখান থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।

বিচারপতি সিনহা বিদেশ যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ গুরুতর ১১ অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায়।

এদিকে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা দাবি করেছেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।