দাতব্য ট্রাস্ট মামলা: যুক্তিতর্ক ছাড়াই রায় চায় দুদক

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার তিনটি ধার্য তারিখে আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করায় বিচারের এ অংশটি বাদ দিয়েই রায়ের তারিখ নির্ধারণের জন্য আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2018, 10:09 AM
Updated : 26 Sept 2018, 11:21 AM

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বুধবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে এই লিখিত আবেদন করেন।

যুক্তিতর্ক ছাড়া রায় ঘোষণার আবেদনের পাশাপাশি বিচারকের প্রতি দুই আসামির অনাস্থার কথা জানিয়ে সময়ের আবেদনের বিষয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর আদেশের দিন ঠিক করে দিয়েছেন বিচারক আখতারুজ্জামান।

এ মামলার কার্যক্রম চলছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে বসানো পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে।

এ কারাগারেই আরেকটি ভবনে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

‘অসুস্থতার কারণে’ তাকে গত সাত মাসে একবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করতে সরকারের নির্দেশে সেপ্টেম্বরের শুরুতে আদালত স্থানান্তর করা হয় কারাগারের ভেতরে।

কিন্তু তারপরও খালেদাকে আদালতে আনতে না পেরে গত ২০ সেপ্টেম্বর তার অনুপস্থিতিতেই বিচার চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেন বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।

আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দেওয়া সময়ের তৃতীয় দিন বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৪০ মিনিটের মত আদালতের কার্যক্রম চলে।

যুক্তিতর্ক ছাড়াই রায়ের তারিখ নির্ধারণের পক্ষে যুক্তি দিয়ে দুদকের আইনজীবী কাজল আদালতে বলেন, “আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে আসছেন, সব ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, কিন্তু যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন না। ফৌজদারি কার্যবিধির চ্যাপ্টার ২০ অনুযায়ী এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ না থাকলেও তাদের সে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”

বিচার ‘বিলম্বিত করার জন্য’ আসামিপক্ষ আদালতে বার বার সময় বাড়ানোর আবেদন করে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সুবিচার ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে রায়ের তারিখ নির্ধারণের আবেদন আমরা করছি।”

আদালতের বাইরের ‘চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও পরামর্শে’ আসামিপক্ষ ‘একগুয়ে’ আচরণ করছে বলেও মন্তব্য করেন দুদকের আইনজীবী।

রাষ্ট্রপক্ষের এই বক্তব্যের বিরোধিতায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতে বলেন, “প্রসিকিউশন বলছে, আমরা ন্যায়বিচার ব্যাহত করছি। অথচ আমরা প্রতি তারিখেই আদালতে আসছি, আদালতে আমাদের আর্জি জানাচ্ছি। আমাদের সময়ের আবেদন না মঞ্জুর হওয়ার পরও বারবার আসছি, আমরা আদালতের কাছেইতো আসব।”

এই বিচারকের রুলিংয়েই মামলায় যুক্তিতর্ক চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে এই মামলার আইনে যুক্তিতর্ক ‍উপস্থাপনের সুযোগ নেই। কিন্তু আপনিইতো রুলিং দিয়ে বলেছেন, আপনি যুক্তিতর্ক শুনবেন। যুক্তিতর্ক চলছেও।”

যুক্তিতর্ক ছাড়াই রায় ঘোষণার আবেদন গ্রহণ করা হলে বিচার সম্পর্কে জনগণের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে মন্তব্য করে মাসুদ তালুকদার বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “তাড়াহুড়া করে যদি এই বিচার স্টিগমায় পড়ে যায়, প্রহসনের বিচার হয়ে যায়- তার দায়-দায়িত্ব আপনি নিতে পারবেন না।

“এই বিচার যদি ‘জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিডের’ বারিড জাস্টিস হয়ে যায়, তার অংশ আমরা আইনজীবীরা হতে পারি না, আপনাকেও হতে দিতে পারি না।”

খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া অন্যদিনের মতই জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির আদেশ চেয়ে আবেদন করেন। পাশাপাশি তার সিনিয়র আইনজীবী আবদুর রেজাক খানের অসুস্থতার কথা জানিয়ে শুনানি পেছানোর আবেদন করেন।

আসামি মনিরুল ইসলাম খানের স্থায়ী জামিন বহাল রাখার আবেদন করেন তার আইনজীবী আক্তারুজ্জামান।

অন্যদিকে খালেদার জামিন বাড়ানো ও মনিরুলের জামিন বহালের আবেদন নাকচ করার আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী কাজল।

পরে বিচারক খালেদার জামিন বাড়ানোর আবেদন মঞ্জুর করেন এবং মনিরুলের জামিন ৩০ তারিখ পর্যন্ত বহাল রাখেন।

এর আগে সোমবার আরেক আসামী জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুলের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ও আক্তারুজ্জামান বিচারকের আখতারুজ্জামানের প্রতি অনাস্থার আবেদন নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য ২০ দিনের সময় দেওয়ার আবেদন করেছিলেন।

বুধবার এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য থাকলেও তা দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে পুনরায় ৩০ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করে দেন বিচারক।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার এক আসামি খালেদা জিয়ার সাবেক ‍উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী পলাতক রয়েছেন। তাকে বাদ রেখেই পুরাতন কারাগারের ভেতরে অস্থায়ী আদালত বসানোর আগে এই মামলার কার্যক্রম চলছিল পুরান ঢাকার বখশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে।

এ মামলায় দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেও খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির যুক্তিতর্ক শুনানি বাকি রয়েছে।

বুধবার অনাস্থার আবেদন দেওয়া জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতে উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি। অন্যদের মধ্যে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু আদালতে উপস্থিত ছিলেন।