বালুমহাল দখলকারীদের ঠেকাতে ডিসিদের আহ্বান

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙনে উদ্বেগ জানিয়ে নদী ও বালুমহাল দখলকারী  ‘মাফিয়াদের’ ঠেকাতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকদের তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নদী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2018, 05:54 PM
Updated : 23 Sept 2018, 05:58 PM

রোববার বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে রিভারাইন পিপলের উদ্যোগে  ‘বালু উত্তোলন ও আমাদের নদী’ শীর্ষক সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বজুড়েই বালু উত্তোলন নদীর জন্য এক বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।

রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকনের সঞ্চালনায় এবং পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম ইনামুল হকের সভাপতিত্বে সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অক্সফামের ওয়াটার গভর্ন্যান্স সমন্বয়ক এনামুল মজিদ খান সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুল হক হাওলাদার বলেন,  “জেলা প্রাশসকরা যদি ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারেন, তাহলে নদী রক্ষা করা কঠিন হবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা আইন প্রয়োগে আন্তরিক হলে বালুমহাল নিয়ে মাফিয়াচক্র গড়ে ওঠার সুযোগ পাবে না।”

চলতি বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে দেশের নদ-নদীগুলোর দখল ও দূষণরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছিলেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।

তখন নৌমন্ত্রী বলেছিলেন, “নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে, তাই অবৈধভাবে যাতে বালু উত্তোলন না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব আমরা দিলাম। … নদী দূষণমুক্ত করার জন্য, দখলমুক্ত করার জন্য আমরা তাদের (ডিসি) দায়িত্ব দিলাম ।”

তবে জেলা প্রশাসক ‘একা’ কাজ করলেই হবে না বলেও মনে করেন জাতীয় নদী কমিশনের চেয়ারম্যান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফ থেকে নদী সুরক্ষায় ‘ডাইরেক্ট ইনস্ট্রাকশন’ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি যে কাজগুলো শুরু করেছি, উনি (প্রধানমন্ত্রী) কখনও আমাকে টেলিফোন করে বলেননি, নদী কমিশন এই কাজটি করবে না।”

এসময় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ প্রসঙ্গে মুজিবুল হক হাওলাদার বলেন, “এই আইনে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার।”

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ইনামুল হক বলেন, “নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনকারীরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। নদী রক্ষায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ ও স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে হবে।”

অক্সফামের কর্মসূচি পরিচালক বিএম আখতার বলেন,  “দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বালু উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। তবে তা হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত ও প্রতিবেশগতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ।

“বালুমহাল আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে বালু উত্তোলনকারীদেরও আলোচনায় আনতে হবে। তাহলে সমন্বিতভাবে আইনের প্রয়োগ করা সহজ হবে।”

অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে আসা ক্ষতিগ্রস্ত লাইজু আক্তার বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙন ছাড়াও গাছ মরে যাচ্ছে ও আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।

বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ‘না’ পাওয়ার অভিযোগ তুলে ধরে লাইজু বলেন, “তাহলে আমরা কার কাছে যাব?” 

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রিভারাইন পিপলের পরিচালক মোহাম্মদ এজাজ।

এর সহ-আয়োজক ছিল অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্সেস স্টাডিজ (সিএনআরএস) এবং গ্রাম উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে)।

অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, অক্সফামের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক ড. খালিদ হোসাইন, স্টাম্পফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, হাওরাঞ্চলবাসীর সমন্বয়ক জাকিয়া শিশির, নোঙরের চেয়ারম্যান শামস সুমন, সিএনআরএসের গভর্নন্সে অ্যাডভাইজার মোজাহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, জিইউকের সমন্বয়ক রোকনুজ্জামান জিল্লুলিল্লাহ, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আলতাফ হোসেন রাসেল, অক্সফামের আঞ্চলিক পানিব্যবস্থাপনা সমন্বয়ক প্রিয়দর্শিনী অভি, বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সহিদা বেগম।

বিশ্ব নদী দিবস পালন

বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে অর্ধ শতাধিক নদী, পরিবেশ এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর অংশগ্রহণে   ‘নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন বন্ধ কর’ প্রতিপাদ্যে শনিবার আয়োজিত হয় ‘নদীর জন্যপদযাত্রা’।

পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় (সদরঘাট টার্মিনাল) পর্যন্ত নদী রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে পদযাত্রায় অংশ নেন সংগঠনগুলোর কর্মীরা।

শিক্ষার্থীদের মাঝে নদী নিয়ে সচেতনতা গড়তে রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে রিভারাইন পিপল।

রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা ফরিদা ইয়াসমীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কারমাইকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক তোফায়েল হোসেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন,  “নদী আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। এই নদীও আমাদের মায়ের মতো।”

রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, “নদী নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রিয় ফল, ফুল, রঙ, বই, নাটক, সিনেমার মতো প্রিয় নদীও নির্বাচন করতে হবে।”  

আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা মানব-অক্ষরে ‘রিভার ইজ মাদার’ লেখা তৈরিতে অংশ নেয়।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের চতুর্থ রোববার হিসেবে এবছর বিশ্ব নদী দিবস পালিত হয় ২৩ সেপ্টেম্বর।