নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে চাই সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোট: মহিলা পরিষদ

সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোট না হওয়ায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন আটকে আছে বলে দাবি করেছে মহিলা পরিষদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2018, 02:35 PM
Updated : 23 Sept 2018, 02:36 PM

রোববার মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক নেতারাও সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান প্রকাশ করেন।

‘জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন নয়, নির্বাচন চাই’ শীর্ষক এই সভায় মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, “সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়টি নারীর ক্ষেত্রে এখনও আসেনি। এর ফলে নারীরা ক্ষমতায়িত হচ্ছে না এবং রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আসতে পারছে না।

“নারীরা কি শুধু সংরক্ষিত আসনেই থাকবে, না দলের নেতৃত্বে থেকে মূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবে এই বিষয়টি আজ রাজনীতির এজেন্ডায় আসা উচিৎ।”

বাংলাদেশে সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন প্রথমে ছিল ১৫টি; পরে তা বাড়তে বাড়তে এখন ৫০টি। সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনে নারী আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়ানোর সময় নারী সংগঠনগুলো সেখানে সরাসরি নির্বাচনের দাবি তুললেও তা উপেক্ষিত হয়।

আয়শা খানম বলেন, “কারও মতামত ছাড়াই হঠাৎ করে জাতীয় সংসদে পাস করে নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করেছে।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে সংরক্ষিত আসনে নারীদের সরাসরি অংশগ্রহণ করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ চেষ্টা করেছে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এবং এর ফলে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও হয়েছে। সরাসরি নির্বাচন নারীরা করবে, তাতে কোনো দ্বিমত নেই। তবে যাকে সুযোগ দেওয়া হবে, সেই ক্ষেত্র তাদের কাজে লাগাতে হবে। দেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী হলেও দেশের সামগ্রিক কাঠামোকে নারীবান্ধব করতে হবে।”

জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোট প্রয়োজন বলে মনে করেন কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

 তিনি বলেন, “হাজার বছর ধরে যাদের বঞ্চনা করে পেছনে ফেলা হয়েছে, তাদের জন্য যদি ইতিবাচক বৈষম্যের সুযোগ না দিয়ে সামনে না আনা হয়- তাহলে এই বৈষম্য থেকে যাবে। পিছিয়ে পড়া মানুষকে বিশেষ সুবিধা দেওয়াটা ক্ষমতায়নের সাথে সম্পর্কিত। সেজন্য নারীদের যার যার অবস্থান থেকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।”

দৈনিক সমকালের উপ-সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, “সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন এখন অমাদের দেশে হতে পারে, হওয়া উচিৎ। স্থানীয় সরকারের নারী প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি আরও শক্তিশালী হওয়া উচিৎ।”

বিদ্যমান ব্যবস্থার সমালোচনা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, “যে নারী প্রতিনিধিরা সংসদে বসছেন, তারা নারীদের ভোটে নয়, জনগণের ভোটে নয়, এমনকি রাজনৈতিক দলের ভোটেও নয়; যারা জাতীয় সংসদে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আছেন, তাদের ভোটে তারা নির্বাচিত হন। এটা কখনও নারীর প্রতিনিধিত্ব হতে পারে না।

“আরও ২৫ বছরের জন্য নারীদের এই জায়গাতেই বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে নারীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে সেই নারীদের কখনোই রাজনীতিতে এমন পশ্চাৎপদ অবস্থানে রাখা উচিৎ নয়।”

সভায় বক্তব্য রাখেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু প্রমুখ।