জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদী বাঁচানোর আহ্বান

নদীর বিপন্ন হলে নদীকেন্দ্রীক জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ে বলে এক আলোচনা সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নদী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2018, 04:59 PM
Updated : 21 Sept 2018, 06:50 PM

শুক্রবার বিকালে রিভারাইন পিপলের আয়োজনে মিরপুর চিড়িয়াখানায় আলোচনা সভা ও নদীজ প্রাণি পরিদর্শন কর্মসূচিতে নদী বাঁচানোর আহ্বান জানান তারা।

‘যেখানে নদী বয়, সেখানেই জীববৈচিত্র্যময়’ স্লোগানে চিড়িয়াখানার লেকের সামনে সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন রিভারাইন পিপলের পরিচালক মোহাম্মদ এজাজ।

জলচর সরিসৃপ ঘড়িয়ালের বিপন্ন হয়ে ওঠা ও ঘড়িয়াল বাঁচাতে সচেতনতা গড়ে তোলা ও নদীকে জলজ প্রাণীর বাসযোগ্য করে তোলা নিয়ে বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের (আইইউসিএন) সীমান্ত দিপু।   

সুন্দরবনের খালগুলোতে মাছ ধরার জন্য বিষ দেওয়ার কারণে আশেপাশের নদীতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বলে জানান দিপু।

“এজন্য ডলফিনের খাবারের অনেক বড় প্রবলেম”, বলেন তিনি।

পরে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইনের প্রয়োগ নিয়ে সীমান্ত দিপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “সবকিছু বিবেচনা করলে আমাদের আইন খুব ভাল আছে।... একসময় তো কচ্ছপ যেখানে-সেখানে বিক্রি হতো। সাপ মেরে ফেলতো। কিন্তু  এই সময়টাতে আমরা দেখছি, সাধারণ মানুষ, সোশাল মিডিয়াতেও অনেক অ্যাকটিভ… অনেক কমে গেছে।মানুষ কিন্তু এখন আইনের বিষয়গুলো জানে।”

আলোচনা সভায় উপস্থিত নদীকর্মী ও আগ্রহীদের কাছে জীববৈচিত্র্যে সরীসৃপ কাছিমের অবস্থান ও কাছিমের উপযোগী বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন সরীসৃপ গবেষক শাহরিয়ার সিজার রহমান।

আগের মত এখন আর কচ্ছপ দেখা যায় না উল্লেখ করে সিজার বলেন,  “যে ২০ প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে বাংলাদেশের নদী এবং জলাশয়ে, সবগুলো কিন্তু একদমই বিলুপ্তির পথে। এটার প্রধান কারণ আসলে শিকার; নির্বিচারে শিকার করা।”

এসময় পদ্মা ও যমুনার কাছিম প্রজাতিগুলো বিলুপ্তির পথে জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

নদী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গবেষণায় জোর দিয়ে এই সরীসৃপ গবেষক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “এই নদীটা বাঁচালে অর্থনৈতিকভাবে কী লাভ হবে অথবা এই নদীটা হারিয়ে গেলে কী ক্ষতি হবে? সেক্ষেত্রে কিন্তু ঘুরেফিরে গবেষণার একটা দরকার রয়েছে। সেই জায়গাটা এখনো আমাদের গুছানো না।”

আলোচনা শেষে উপস্থিত নদীপ্রেমীদের আগ্রহী প্রশ্নের উত্তর দেন বক্তারা।

আয়োজনের শেষ পর্যায়ে চিড়িয়াখানার ঘড়িয়ালের খাঁচা পরিদর্শন করা হয়। চিড়িয়াখানার এই খাঁচার ভেতরের  একটি জলাশয়ে একটি স্ত্রী ও তিনটি পুরুষ ঘড়িয়াল রয়েছে। এরপর পাশের খাঁচায় রাখা কুমির দেখেন অংশগ্রহণকারীরা।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রোববার হিসেবে এবার ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবসকে সামনে রেখে মাসব্যাপী বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি পালন করে আসছে নদী ও পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনগুলো।

চিড়িয়াখানায় এই আয়োজন নিয়ে রিভারাইন পিপলের পরিচালক মোহাম্মদ এজাজ বলেন,  “নদী মানেই তো শুধু পানি না। নদী মানে একটা বায়োডাইভার্সিটি। একটা ইকোসিসটেম।

“আমরা যারা নদী নিয়ে কাজ করি তারা তাদের পরিবারকেও নিয়ে এসেছি। কারণ এডুকেশনটা ঘর থেকেই হওয়া উচিৎ। পাশাপাশি যারা এক্সপার্ট, আমরা সবাইকে আজকে একসাথে করেছি। তারা তাদের গবেষণার এক্সপেরিয়েন্সটা শেয়ার করছেন। সেজন্যই আজকে চিড়িয়াখানায় আসা।”

সবাই সচেতন হলে আগামী প্রজন্মের জন্য দূষণহীন নদী পুনরুদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করেন এই নদীকর্মী।