সোমবার ঢাকার গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় এক বাস মালিক প্রয়াত মেয়রের প্রস্তাবটি তোলার পর অন্যদের তোপের মুখে পড়েন।
রাজধানী গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে এ সভার আয়োজন করে বাস মালিকদের সমিতি। সভায় প্রায় দুই হাজার পরিবহন মালিক উপস্থিত ছিলেন।
সভার এক পর্যায়ে মোহনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ সবুজ উদ্দিন বলেন “প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ছয়টা কোম্পানির মাধ্যমে বাস আনার যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।”
তার এ কথা শেষ না হতেই সামনে থাকা বাস মালিকরা ‘না, না, না’ বলে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এ সময় মিলনায়তন জুড়ে হট্টগোল শুরু হয়।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সভার সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
এরপর সবুজ উদ্দিন ক্ষমা চেয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিলে মালিকরা শান্ত হয়। তিনি আর কোনো কথা বলেননি।
তবে সভার সমাপনী বক্তব্যে মেয়র আনিসুল হকের পরিকল্পনার ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সাধারণ মালিকরাও লাভবান হবেন।
“এই প্রক্রিয়ায় পাঁচ বছরের পুরনো সব গাড়ি সরকার তুলে নিয়ে যাবে। সেগুলো স্কুল-কলেজকে দিয়ে দেওয়া হবে। স্কুল-কলেজ থেকে প্রাইভেটকার উঠে যাবে। পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সের গাড়িগুলোকে রিমডেলিং করা হবে। নতুন চার হাজার গাড়ি যোগ হবে।
“সবাই শেয়ারহোল্ডার হবেন, ব্যক্তি মালিকানা থাকবে না। ভাড়াও বাড়বে। বিদেশের মতো ভাড়াও আদায় হবে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে।”
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পক্ষে থাকতে বাস মালিকদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “এইটায় দ্বিমত কইরেন না। আপনারা পক্ষে থাকেন।”
সভায় পরিবহন খাতের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন মালিক এবং শ্রমিক নেতারা।
দুর্ঘটনা ঘটলে মালিক এবং যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা না করে চালকের বিরুদ্ধে করার প্রস্তাব করেন আজমেরী পরিবহনের মালিক মো. রফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, “মালিক দুর্ঘটনা ঘটায় না, এজন্য মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা ঠিক নয়।”
সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেয় বলে অভিযোগ করেন আরেকজন পরিবহন মালিক।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাস মালিকদের অনেকেই বলেন, চালক সঙ্কট থাকায় অদক্ষ চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দেন তারা।
দক্ষ চালকের অভাবে মালিকরা ‘বিপদেই আছেন’ মন্তব্য করে এনায়েত উল্লাহ বলেন, দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভারী যানবাহন থাকলেও চালকের সঙ্কট রয়েছে।
“আমাদের হিসাব মতে ২ লাখ চালকের সংকট রয়েছে। যাদের হেভি লাইসেন্স নেই। আমরা ড্রাইভার নিয়ে বেশ বিপদেই আছি।”
চালকদের প্রশিক্ষণে বিআরটিসির যে কয়েকটি ইনস্টিটিউট আছে, তাও পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে এনায়েত উল্লাহ বলেন, “তাই মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আমি প্রস্তাব করেছি, কেবল ব্যবহারের জন্য আমাদের একটা জায়গা দেওয়া হোক; যেখানে আমাদের উদ্যোগে আমরা চালক তৈরি করব।”
পরিবহন মালিকদের সমস্যাগুলো নিয়ে সরকার ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলেও জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ।