পদ্মাগর্ভে বিলীন ২৫৬ বর্গমাইল

অর্ধ শতকের বেশি সময় ধরে পদ্মার বহুরূপী ভাঙনে বাংলাদেশের ২৫৬ বর্গমাইল ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2018, 06:21 PM
Updated : 15 Sept 2018, 03:31 AM

২০১৮ সালের অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) আর্থ অবজারভেটরির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক দশক ধরে আঁকাবাঁকা ও মুচড়ানো পথে পদ্মা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রতিটি আঁকাবাঁকা গতি ও মোড় বড় বন্যা বা কাছাকাছি কোনো বাঁধ খুলে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনার কথা বলে।

“আর এসব ঘটনা নদী তীরের তীব্র ভাঙনের সঙ্গে সঙ্গে ঘরবাড়ি, জমাজমি এমনকি মানুষকে ভাসমান করে দেয়। এভাবে প্রতিবছর ভাঙতে ভাঙতে ১৯৬৭ সাল থেকে ৬৬ হাজার হেক্টর বা ২৫৬ বর্গমাইলের বেশি (প্রায় শিকাগোর সমান) এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।”

১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে নাসার স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিগুলোতে পদ্মার গঠন, আকৃতি ও অবস্থানের পরিবর্তন দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটের ছবিতে পদ্মা নদীর প্রস্থ, গভীরতা, গঠন ও আকারের পার্থক্য থেকে ভাঙনের পরিমাপ করেন।

নাসার ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত ছবিগুলো শুষ্ক মৌসুমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তোলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন দশক ধরে পদ্মা নদী তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ, সোজাসুজি অবস্থান থেকে আঁকাবাঁকা হয়ে চুলের গুচ্ছের মতো বিভক্ত ধারায় গতিপথ পরিবর্তন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আবার সোজা পথে প্রবাহিত হয়েছে।

স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা যায়, পদ্মার বহুরূপী গতির কারণে সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে হরিরামপুর উপজেলার অঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে। এই এলাকায় নদীর তীরে ভাঙনের কারণে পদ্মা ব্যাপক প্রশস্ত হয়েছে।

ছবি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে, ১৮৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই এলাকায় পদ্মার বাম তীর ভাঙতে ভাঙতে ১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান করছে। এর ফলে সেখানে আঁকবাঁকা বাঁক তৈরি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণভাবে নদীর বাঁকের বাইরের দিকটায় সবচেয়ে বড় ভাঙন হয়েছে। যেখানে কতগুলো প্রক্রিয়া ভূমিক্ষয়কে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। এগুলো হলো- নদীর প্রবাহে পরিবর্তন, জমাট মাটির নিচের দিকে ধাবিত হওয়া এবং নদী ও ভূমির সঙ্গমস্থলে গাছপালা ধুয়ে নিয়ে যাওয়া। পদ্মার মধ্যবর্তী অংশে তুলমনামূলক কম ভাঙন হয়েছে।

বন্যার প্রবাহের তীব্রতা ও তীরের ধরনের সাথে ভাঙনের হারের পরিবর্তন দেখা যায়। ১৯৯৮ সালে ভারতে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বন্যা এসব তীর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পদ্মার রয়েছে বিস্তৃত বালিভূমি, যা সহজেই ক্ষয়যোগ্য।

১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে ভাঙনের হার প্রতিবছর ১২ বর্গমাইলে পৌঁছে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আরও নিম্নগামী প্রবাহ ও বক্রগতির চর জানাজাতের কাছে জায়গা-জমি ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে নদীর রেখাচিত্র তীব্রভাবে বেঁকে যায়। বক্ররেখাটি ১৯৯২ সাল থেকে বিকশিত হতে শুরু করে, ২০০২ সালে পতন শুরু হয় এবং এরপর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

 

পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং নদী ভাঙন কীভাবে এই নির্মাণকাজকে প্রভাবিত করতে প্রভাবিত করতে পারে সেদিকটিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। নদীর ভাঙন পদ্মা সেতু নির্মাণে কিছু হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন উদ্বেগের কথা রয়েছে। তবে কিছু গবেষকের আশা, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে জমি প্রকৃতপক্ষে স্থির হবে এবং এর ফলে নদী ভাঙন হ্রাস পেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মার তীব্র ভাঙনের দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত- পদ্মা প্রাকৃতিক ও মুক্ত প্রবাহিত নদী, যেখানে ঘরবাড়ি রক্ষায় কখনো কখনো বালির বাঁধ দেওয়া ছাড়া সুরক্ষার তেমন ব্যবস্থা নেই। দ্বিতীয়ত- বিস্তৃত বালুকাবেলায় বসে থাকা নদীর তীর দ্রুতই ক্ষয়ে যেতে পারে।

“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পদ্মার ভাঙনের হার হ্রাস পেয়েছে। নদীটি বক্ররেখার পরিবর্তে জমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এলাকাটি ভাঙন থেকে মুক্ত।”