আমি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতিহিংসার শিকার: মোজাম্মেল

পরিবহন মালিকদের প্ররোচনায় হয়রানি করতেই মামলায় জড়ানো হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

ওবায়দুর মাসুমকামাল তালুকদার ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2018, 02:23 PM
Updated : 14 Sept 2018, 02:23 PM

গত ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুর থানায় করা চাঁদাবাজির এক মামলায় ৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। আদালতের জামিন পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জের কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি।

দুলাল নামের এক ব্যক্তির করা ওই মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ১১ সেপ্টেম্বর তাকে জামিন দেওয়া হয়।

জামিন পেলেও গত ফেব্রুয়ারিতে বিস্ফোরক দ্রব্যের আইনের আরেক মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করায় তার মুক্তি পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। তবে ঢাকার মহানগর হাকিম মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম সেই আবেদন খারিজ করে দিলে মোজাম্মেলের মুক্তির বাধা কাটে।

শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় মোজাম্মেল হক অভিযোগ করেন, যাত্রী অধিকার নিয়ে কথা বললে পুলিশ তার বিরুদ্ধে চল্লিশটি মামলা দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। তিনি পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের প্রতিহিংসার শিকার।

তিনি বলেন, “আমি যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কথা বলি। আর এই কাজ কার্যক্রমের যারা প্রতিপক্ষ, কিছু দুর্বৃত্ত পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি বলে আমি মনে করি। সরকার পরিবহন মালিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাকে চাপে রাখতে চেয়েছে।”

এই দুর্বৃত্ত কারা জানতে চাইলে তিনি কারও নাম বলেননি।

“এই খাতে দুর্বৃত্ত কারা সেটা আপনিও জানেন, আমিও জানি। তাই নাম বলতে চাচ্ছি না। প্রত্যেক মালিক তো আর খারাপ না। এই সেক্টরেও কিছু দুর্বৃত্ত রয়েছে।”

মোজাম্মেল বলেন, সরকার যেমন সড়ককে নিরাপদ করতে চায়, যাত্রী কল্যাণ সমিতিও একই উদ্দেশ্যে কাজ করে। কিন্তু সরকারে থাকা পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সরকারকে ভুল বোঝাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

“তারা সরকারের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করার সুযোগ পায়, আমরা সরকারের কাছাকাছি থাকি না, সে কারণে সরকারকে অনেক কিছু বোঝাতে সক্ষম হই না। আমি মনে করি সরকারকে তারা সব সময়ই ভুল বোঝায়। এভাবে ভুল বোঝানোর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের সঙ্গে আমাদের একটা দূরত্ব তৈরি করে রেখেছে। এই দূরত্ব বাড়ানোই ছিল তাদের পরিকল্পনা।”

দেশের সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতির পদে রয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। সম্প্রতি ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর তার পদত্যাগের দাবি উঠেছিল।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বাস মালিকদের সংগঠনের সাথে জড়িত।

মোজাম্মেল হক চৌধুরীর দাবি, যে লোক তাকে চেনে না তার করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুরো বিষয়টিই ছিল সাজানো। এতে পুলিশ সহযোগিতা করেছে।

“রাত তিনটায় আমাকে বাসা থেকে তুলে আনে পুলিশ। ওই মামলার এজাহারে আমার পিতার নাম, আমার ঠিকানা ছিল অজ্ঞাত। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আমাকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তখন এসআই বজলুর রহমান আমাকে বলেন, ‘এটা ডিসি স্যারের নির্দেশ। আপনাকে যেতে হবে’।”

গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে কোনো নির্যাতন করা না হলেও মিরপুর থানার ওসি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন আর না করতে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

“রিমান্ড আবেদনের দিন মিরপুর থানার ওসি মো. দাদন ফকির আমাকে বলেছে, আমি মিডিয়াতে যেসব তথ্য উপাত্ত দেই সেগুলো ভুয়া। এইগুলোর জন্য আমার বিরুদ্ধে ৪০টা মামলা দিবে। আমি নাকি জামাত-শিবিরের রাজনীতি করি, এসবও বলেছে। সেও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সুরেই কথা বলেছে।”

মোজাম্মেল হক চৌধুরী দাবি করেন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন তিনি। তবে নির্বাচনের সময় এলাকার আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন।

চাঁদাবাজির অভিযোগ পুরোই মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, “আমি চট্টগ্রামের একটি পত্রিকার ঢাকার ব্যুরো প্রধান। সেখান থেকে কিছু টাকা পাই। টেলিভিশন টক শো থেকেও কিছু টাকা আসে। এছাড়া গ্রামের বাড়িতে আমাদের ব্যবসা আছে। আমি একজন অংশীদার হিসেবে কিছু টাকা সেখান থেকেও পাই। এভাবেই কোনোমতে চলি। এমন ছোট বাসায় থাকি, বন্ধুবান্ধবদের বাসায় নিই না লজ্জায়।”

এদিকে মোজাম্মেলকে আরও মামলা দেওয়ার হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি তাকে এ ধরনের কোনো কথা বলিনি।”

চাঁদাবাজির মামলায় অভিযোগের কতটা সত্যতা পেয়েছেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, “মামলার বাদী আমাদের জানিয়েছেন, তিনি কিভাবে আসামিকে টাকা দিয়েছেন, সে সাক্ষী আছে। এ বিষয়টিও আমরা তদন্ত করছি।”

যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন জানিয়ে তিনি এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।

“নিরাপদ সড়ক এবং সড়কে নৈরাজ্য বন্ধের আন্দোলন অবশ্যই অব্যাহত রাখব। আমি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই, কেননা বাস মালিকদের সভাপতিও মন্ত্রী, শ্রমিকদের সভাপতিও মন্ত্রী। এর আগে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করার সময় রাখেনি। সড়ক পরিবহনের মতো একটা আইন করেছে সেখানে যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব থাকা দরকার থাকলেও কাউকে রাখেনি। এসব বিষয়ে তো কথা বলতে হবে।”