ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নিরবতায় আদালত অবমাননার মামলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনে হাই কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে পাঠানো আইনি নোটিসের যথাযথ জবাব না দেওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2018, 10:53 AM
Updated : 12 Sept 2018, 11:14 AM

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বুধবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মামলাটি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যপারে পদক্ষেপ নিতে উচ্চ আদালতের রায়ের যে বাধ্যবাধকতা সে বিষয়টি উল্লেখ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানি ও কোষাধ্যক্ষ ড. কামাল উদ্দিনকে আইনি নোটিস দিয়েছিলাম।

“উপাচার্যের পক্ষে একজন আইনজীবী একটা জবাব দিয়েছেন। কিন্তু আমরা যে নির্বাচনের ব্যপারে পদক্ষেপ নিতে বলেছি সে ব্যপারে তারা পদক্ষেপ নেননি, এটা নিশ্চিত হয়েই এই মামলাটা করা হয়েছে।”

মনজিল মোরসেদ বলেন, “জবাবে তো তারা বলবে যে, পদক্ষেপ নিয়েছি বা নিচ্ছি। কিন্তু সেরকম কোনো জবাব না দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যপারে আইনি নোটিসে আমরা যে বক্তব্য দিয়েছি, তা তারা অস্বীকার করছেন।”

আগামী রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হতে পারে বলে জানান এ আইনজীবী।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ছয় বছর আগের একটি রুল যথাযথ ঘোষণা করে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি দেওয়া রায়ে ছয় মাসের মধ্যে এই নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা দরকার হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সে বিষয়ে ‘যথাযথ সহযোগিতা’ দিতেও রায়ে বলে দেয় আদালত।

এ রায়ের পর গত সাত মাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কি না, তা জানতে গত ৪ সেপ্টেম্বর আইনি নোটিস পাঠান রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরের বছর যাত্রা শুরু করে ডাকসু। প্রথমে পরোক্ষ নির্বাচন হলেও শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ডাকসু নির্বাচন শুরু হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর।

ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে ডাকসু এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতারা ছিলেন সামনের কাতারে। স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। 

প্রতিবছর ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভোট হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সে নির্বাচন হয়নি।

পরে ডাকসু নির্বাচনের পদক্ষেপ নিতে প্রথমে ৩১ শিক্ষার্থীর পক্ষে ২০১২ সালের ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও কোষাধ্যক্ষকে উকিল নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাড়া না দেওয়ায় ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে রিট আবেদন করা হয়।

সেখানে বলা হয়, ১৯৯৮ সালের ২৭ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ডাকসু নির্বাচনের পর এর সময়সীমা হবে এক বছর। পরবর্তী তিন মাস নির্বাচন না হলে বিদ্যমান কমিটি কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। এ সিদ্ধান্তের পর ডাকসু ভেঙে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে আমানউল্লাহ আমান সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং খায়রুল কবির খোকন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বর্তমানে আমান বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আর খোকন যুগ্ম মহাসচিব।

ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে এলেও তারপর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কেন্দ্র সিনেটে ছাত্রদের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকছে না।