গত ২২ অগাস্ট রাতে লামার ফাঁসিয়াখালীর রাংগতিপাড়ায় দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এরপর ৪ সেপ্টেম্বর মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, জনউদ্যোগ, কাপেং ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
সেখান থেকে ফিরে মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে পরিদর্শনের বিস্তারিত তুলে ধরে সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এছাড়াও ধর্ষণের শিকার দুই কিশোরী ও তাদের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিও জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রীনা রায় আসামিদের গ্রেপ্তার না করার সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “অভিযুক্তদের আটক না করা উদ্বেগজনক ও আইনের ব্যত্যয়।”
দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যাদেরকে বিজিবি সদস্য বলা হয়েছে এজাহারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে ধর্ষণের শিকার দুই কিশোরী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য যেতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
রীনা রায় বলেন, “লামার ইউএনও ফোনে লামার সেই মুহূর্তের একটি সংকটের কথা উল্লেখ করে ভিকটিমের এলাকায় না যাওয়ার পরামর্শ দেন আমাদের। পরিবেশ শান্ত হলে আবার লামায় যাওয়ার পরামর্শ দেন।
“সার্বিক পরিস্থিতি ও ইউএনওর পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমাদের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন থেকে বিরত থাকে।”
অভিযুক্তদের প্রসঙ্গে রীনা রায় বলেন, “প্রতিটি ধর্ষণই অপরাধ। তবে ধর্ষণকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হলে বিপদ বেশি।”
জনউদ্যোগের আহ্বায়ক মুশতাক হোসেন বলেন, “আদিবাসী নারীরা এমনিতে বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সমান অধিকার ভোগ করতে পারছে না। তার উপর আদিবাসী নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে।
“ভিকটিমদের সকল প্রকার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু দোষীদের নাম সনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “আমরা জানি যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের মধ্যে আইন-শৃঙ্গলা ভঙ্গকারীদের দ্রুত শাস্তি প্রদান করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে অনেক আদিবাসী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
“আমাদের অবিলম্বে বিচারের দাবিতে সোচ্চার হতে হবে। এই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যদি বন্ধ করতে হয়, তাহলে ঘটনার আসামিকে চিহ্নিত করতে হবে।”
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সহ-সভাপতি আফরোজা বানু বলেন, “আমরা আশা করব যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সময়ক্ষেপণ না করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক। আমরা এই ঘটনার একটা সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যারা ভিকটিম তাদের ক্ষতিপূরণসহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা যাতে প্রদান করা হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, “বিচারহীনতার সংস্কৃতির আবর্তে পড়ে গিয়ে আমরা কোনো সুষ্ঠু বিচার পাই না। অপরাধীদের যাতে সুষ্ঠু বিচার করা হয়, যারা ভিকটিম তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পাশাপাশি সকল আদিবাসী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত যেন করা হয়- সে দাবি জানাচ্ছি আমরা।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন জনউদ্যোগের সদস্য সচিব তারিক হোসেন মিঠুল, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হাসিবুর রহমান সূর্য, ব্লাস্টের অটুট আরেং, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের শরীফ চৌহান এবং বাংলাদেশ আদিবাসী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা।
আরও খবর