প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে হত্যা

ঢাকায় এক রিকশাচালককে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই নারীর প্রেমিককেও।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2018, 05:56 PM
Updated : 10 Sept 2018, 10:13 AM

গ্রেপ্তার পূর্ণিমা রায় (২৬) ও তোতা মিয়া (৩৮) জোট বেঁধে রিকশাচালক অপিন্দ্র দাস ওরফে লাল বাবুকে (৪২) হত্যা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গত ১৯ অগাস্ট পুলিশ লাল বাবুর লাশ উদ্ধার করলেও তার পরিচয় না পাওয়ায় তদন্ত এগোচ্ছিল না। তবে লেগে থেকে তথ্য উদ্ঘাটনের পর পূর্ণিমাকে গ্রেপ্তার করা তিনি খুনের কথা স্বীকার করেন। তার তথ্যে গ্রেপ্তার করা হয় তোতা মিয়াকে।

পূর্ণিমা ও তোতা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও খুনের দায় একজন আরেকজনের উপর চাপাচ্ছেন।

ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুনের ঘটনাটি ক্লু লেস ছিল। পরিত্যক্ত রিকশার সূত্র ধরে এই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটিত হয় এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার সম্ভব হয়।”

কোরবানির ঈদের তিন দিন আগে ১৯ অগাস্ট রাত ৯টায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ খবর পায়, বেড়ি বাঁধের কাছে ফিউচার টাউন নামে একটি হাউজিং প্রকল্পের ভেতরে একটি খালি প্লটে কাশবনের ভেতরে একজনের লাশ পড়ে আছে।

পচে যাওয়া ওই লাশটি কার, তা শনাক্ত হয়নি তখন। মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা নথিভুক্ত করে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই নয়ন মিয়াকে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি। একদিন বাদে ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছুটা দূরে পড়ে থাকা একটি রিকশা থেকে সূত্রের সন্ধান খুঁজতে থাকেন তিনি।

ওই রিকশার পেছনে ‘ঢাকা সিটি মুক্তিযোদ্ধা রিক্সা-ভ্যান মালিক কল্যাণ সোসাইটি’ নামে একটি টিনের প্লেট লাগানো ছিল, যাতে একটি নম্বর ও কার্যালয় হিসাবে ফার্মগেইট ও মগবাজার লেখা ছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা নয়ন ওই সমিতির মগবাজার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রিকশার ওই নম্বরটি মোহাম্মদপুরের নবীনগরের তোফাজ্জল নামে একজনকে দেওয়া হয়েছে। তখন খুঁজে বের করা হয় তোফাজ্জলকে।

এই রিকশার সূত্র ধরেই উদ্ঘাটন হয় হত্যারহস্য

পুলিশ কর্মকর্তা নয়ন বলেন, “তোফাজ্জল যখন বলে যে নম্বরটি কাকে দিয়েছে সেটা তার মনে নেই, তখন আবার হতাশায় পড়তে হয়।”

তখন বিভিন্ন রিকশার গ্যারেজে খোঁজ নিতে শুরু করেন তিনি। ২৫ অগাস্ট নবীনগরের একটি গ্যারেজ থেকে খবর আসে, তাদের এক চালক রিকশাসহ নিখোঁজ।

এসআই নয়ন বলেন, “ওই গ্যারেজে গিয়ে রিকশার ছবি দেখালে রিকশামালিক চিনতে পারেন এবং রিকশা কাকে দিয়েছে, তা জানান। সে অনুযায়ী রিকশাচালকের বাসায় গিয়ে স্ত্রী পূর্ণিমাকে লাশের ছবি দেখালে পরনের কাপড় দেখে সে চিনতে পারার কথা জানায়।”

তখন পুলিশ জানতে পারল যে নিহতের নাম লাল বাবু। কিন্তু তখন পর্যন্ত জানা যায়নি খুনি কারা, আর কেনই বা এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এসআই নয়ন মিয়া বলেন, রিকশাচালকের বাড়িতে গেলে ওই এলাকার অনেকেই তার স্ত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলে। তখন তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে পূর্ণিমার মোবাইল ফোন নম্বর ধরে অনুসন্ধান চালান।

তখন একটি নম্বরে পূর্ণিমার দীর্ঘসময় কথা বলার প্রমাণ পেয়ে তাকে সন্দেহ এসআই নয়ন মিয়া।

গ্রেপ্তার তোতা মিয়া

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “১ সেপ্টেম্বর তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তোতা মিয়া নামে একজনের সাথে পরকীয়া এবং তাকে নিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপর তোতা মিয়াকে কৌশলে মধ্যরাতে চন্দ্রিমা উদ্যানের একটি বাড়ির ছাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

থানায় আনার পর তোতা মিয়া পূর্ণিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেও হত্যার বিষয়টি এড়িয়ে যান।

পরদিন ২ সেপ্টেম্বর পূর্ণিমা আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন এবং পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন।

এসআই নয়ন বলেন, “তোতা মিয়ার সাথে প্রেমের কথা জানতে পেরে পূর্ণিমাকে বকাঝকা করে তার স্বামী। তখন তোতা মিয়ার সাথে শালিস করার কথা বলে নিরিবিলি জায়গায় স্বামীকে সে নিয়ে যায়।

“পূর্ণিমা বলেছে, সেখানে নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কথা বলার ফাঁকে স্বামীর অণ্ডকোষ টিপে ধরে সে। লাল বাবু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন সে লাল বাবুর পা চেপে ধরে, আর তোতা মিয়া গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে।”

এদিকে তোতা মিয়াও ৫ দিন রিমান্ডে থাকার পর ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে জবানবন্দি দেন।

এসআই নয়ন বলেন, “তবে তোতা মিয়া দাবি করেছে, সে গলায় গামছা সে পেঁচিয়ে ধরেনি, গামছা পেঁচিয়ে ধরেছে পূর্ণিমা, আর সে পা চেপে ধরেছিল।”

তোতা মিয়া বিবাহিত, তার দুটি স্ত্রী রয়েছে। লাল বাবুর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিল পূর্ণিমা। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর পূর্ণিমাকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের দুটি মেয়ে রয়েছে। খুনের সময় মেয়ে দুটি দিনাজপুরে তাদের নানীর বাড়িতে ছিল।