রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ না তোলার প্রশংসায় বিমসটেক মহাসচিব

নেপালের কাঠমান্ডুতে চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি না তোলাকে কূটনৈতিক পরিপক্কতার পরিচয় বলে মনে করছেন এই আঞ্চলিক জোটের মহাসচিব মো. শহীদুল ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2018, 06:47 PM
Updated : 3 Sept 2018, 06:47 PM

সোমবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সঙ্কটের অস্তিত্বকে কেউই অস্বীকার করছে না এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে অবশ্যই এক যোগে এর সমাধানে কাজ করতে হবে। তবে বাণিজ্যিক, বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা বজায় থাকা জরুরি।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিমসটেক মহাসচিব বলেন, “সংগঠনটি এই ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তুত নয় এখনও; এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দিক থেকে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ না তোলাটাই কূটনৈতিক পরিকপক্বতা বলে আমরা মনে করি।”

কাঠমান্ডু থেকে ফেরার পর রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, দ্বিপক্ষীয় সমস্যা হিসেবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি এই জোটের সম্মেলনে তোলেননি তিনি।

বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে অর্থনৈতিক জোট বিমসটেক গঠিত হয়।

মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে এক বছরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। মিয়ানমারের উপর চাপ বাড়াতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গকে এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না- এ প্রশ্নের জবাবে সাবেক রাষ্ট্রদূত শহীদুল বলেন, “আমাদের মাঝে সুস্পষ্ট মতৈক্য আছে, এমন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা সম্ভব।

“মতৈক্যের অভাব রয়েছে এমন বিষয়ের জন্য যে সব ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রয়েছে সেগুলোর অগ্রগতি যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। আমরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সংযোগ এবং শক্তি সহযোগিতায় অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছি।”

সদস্য দেশগুলোর সম্মতি সাপেক্ষে সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ নেপাল আলোচ্যসূচি তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সঙ্কট সম্পর্কে কোনো সদস্যই প্রকৃতপক্ষে বলেনি যে এটি সম্মেলনে আলোচ্য বিষয়সূচিতে থাকা উচিৎ। যেহেতু বিষয়সূচিতে নেই তাই এ বিষয়ে আলোচনা করার কোনো সুযোগও নেই।

“রোহিঙ্গা সঙ্কটে (বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে) দ্বিপক্ষীয় মতভেদ থাকার পরও তাদের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অন্যান্য সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যায়নি। প্রসঙ্গকে আলাদা রাখতে সদস্য দেশগুলোর এই পরিপক্কতাই সংগঠনটিকে আগামীতে আশা দেখাবে।”

গত ৩০ ও ৩১ অগাস্ট অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের নেতারা এই জোটটিকে এগিয়ে নিতে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  

এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি, প্রযুক্তি, কৃষি, মৎস্য, জনস্বাস্থ্য,  মানুষের সঙ্গে মানুষের  যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং পর্যটন।

গ্রিড সংযোগের জন্য একটি সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষর হয় এই সম্মেলনে। 

মহাসচিব বলেন, “সফল এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ গত ২০ বছরের অর্জনের পর্যালোচনা করেন।

“দীর্ঘ চার বছরের বিরতির পর এই সম্মেলনের আয়োজন একটি ইতিবাচক উদ্যোগ এবং সবারই প্রত্যাশা ছিল এগিয়ে যাওয়ার।”

তিনি বলেন, “আমরা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত পেয়েছি যার উপর আমাদের নজর রাখা দরকার এবং যদি আমরা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারি, তবে আমি মনে করি এটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলের সদস্য দেশগুলোর ভবিষ্যত সহযোগিতার জন্য খুবই ভালো হবে।”

সদ্য সমাপ্ত এই সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো মিলে বিমসটেক উন্নয়ন তহবিল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

 “যদি আমরা একটি পরিমিত সময়সীমার মধ্যে এটা করতে পারি, তাহলে বিমসটেকের গবেষণা এবং জ্বালানি খাত, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বহু অঞ্চলে আঞ্চলিক সহযোগিতার উন্নয়নে নেওয়া প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিতে তা সহায়ক হবে।”

আরও খবর