ইভিএমের কেন্দ্র বাছাই দৈবচয়ন ভিত্তিতে: সিইসি

জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হবে কিনা- তা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, এ বিষয়ে ইসি এখনও কেবল প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2018, 07:07 AM
Updated : 3 Sept 2018, 07:07 AM

তিনি বলেছেন, আইনি ভিত্তি পেলে রাজনৈতিক মহলসহ অংশীজনের সমর্থন নিয়ে ইভিএম ব্যবহার শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে দৈব চয়ন ভিত্তিতে কিছু আসন বা কেন্দ্র বাছাই করে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।

সোমবার নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে ইভিএম নিয়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্ভোধন করে এ কথা বলেন সিইসি নূরুল হুদা।

তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কী হবে না- এ সিদ্ধান্ত আরও পরের বিষয়ে।

“আমরা এখনও অনেক পিছনের পর্যায়ে রয়েছি। কী পর্যায়ে রয়েছি? আইন কেবল সরকারের কাছে যাচ্ছে। কতগুলো ধাপ রয়েছে… অর্থমন্ত্রালয়ে যাবে আর্থিক সংস্থানের জন্য, কেবিনেটে যাবে, সংসদে যাবে।”

সরকার যদি মনে করে, সংসদ যদি মনে করে তাহলেই আইন সংশোধন হবে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে বলে মন্তব্য করেন সিইসি।

তিনি বলেন, “কোনো ত্রুটি থাকলে তা ব্যবহার করা হবে না।… এখন প্রস্তুতিমূলক অবস্থানে আমরা রয়েছি, এটাকে মাথায় রাখতে হবে। প্রশিক্ষণ নিতে হবে।”

সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির সামনে। আসছে ডিসেম্বরের শেষভাগে এ নির্বাচনের তারিখ ফেলা হতে পারে বলে ইতোমধ্যে আভাসও দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচলিত ব্যালট পেপারের পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহার করতে ইতোমধ্যে নির্বাচনী আইন (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২) সংশোধনের প্রস্তাব কমিশনের অনুমোদন পেয়েছে।

সংসদে বিল পাসের আগে এখন বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভার সম্মতির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব সোমবারই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে হলেও বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে এ যন্ত্রে ভোট করার বিরোধিতা করে আসছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, এটা ‘চাপিয়ে দেওয়া যাবে না’।

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা চাচ্ছি, কিছু কিছু জায়গায় শুরু হোক, সীমিত আকারে এটা দেখুক। প্রযুক্তির কোনো সিস্টেম লস হয় কি না, সেটা দেখা যাক। সেটা হলে সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা হবে। এটা এমন না যে এটাই শেষ কথা। আমরা সীমিত আকারে শুরু করি প্রযুক্তির ব্যবহার।”

সোমবার ইভিএম নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে সিইসির কথাতেও ছিল একই সুর। 

“যদি সরকার আইন প্রণয়ন করেন, যদি সেটা ব্যবহার করার মত পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের থাকে, তখন আমরা এটা র‌্যানডমভিত্তিতে সারাদেশে ব্যবহার করার চেষ্টা করব।“

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে কিছু আসন বেছে নিয়ে সেখানে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করতে চান তারা, যাতে স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, যাতে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয় সেখানে না আসে।

“আমাদের ইচ্ছের ওপর নয়, ৩০০ আসনের মধ্যে র‌্যানডমলি ব্যবহার করব। আমরা যদি মনে করি ২৫টা আসনে ইভিএমে ভোট করব; সেই ২৫টা আমাদের ইচ্ছেমত দেব না।“

২০১০ সালে বাংলাদেশে ইভিএমের শুরুর পর্যায় থেকে এখন প্রযুক্তিগত দিক থেকে এ যন্ত্রের অনেক উন্নতি হয়েছে দাবি করে সিইসি বলেন, আগামীতে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৩৩২টি পৌরসভা এবং ৪৯১টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।

“স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আইনগত কাঠামো আমাদের রয়েছে। এজন্যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। জাতীয় সংসদে করার যদি আইন পাস হয়, তখন আমাদের প্রশিক্ষিত লোক যারা রয়েছেন, তাদের সক্ষমতা যদি অর্জন হয়, ইভিএম যদি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়, কেবল তখনই যতখানি ব্যবহার সম্ভব ততখানি করা হবে।”

সিইসি দাবি করেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন আয়োজনে আর্থিক সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না বলে এ পদ্ধতি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও পাবে।

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে আলোচনা চলছে, তাকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন সিইসি নূরুল হুদা।

“এটা করতে গিয়ে অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে, অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। তারা অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। সেগুলো প্রাসঙ্গিক।”

সিইসি মনে করেন, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে শুরুতে এরকম বাধা-বিপত্তি বা উৎকণ্ঠা থাকা ‘স্বাভাবিক’। প্রশিক্ষণ আর প্রচার ভালো হলেই এর ইতিবাচক প্রভাব গ্রামেগঞ্জে, ভোটার, রাজনৈতিক মহল ও প্রার্থীর কাছে পৌঁছে যাবে।

“এখন পর্যন্ত আমরা প্রচার নিয়ে ব্যাপক অবস্থানে পৌঁছাতে পারিনি। এটা কী, কীভাবে ব্যবহার করা যায়, উপকারিতা কী- এ নিয়ে আমরা মানুষের মধ্যে কাজ করব। এই যে আলোচনা সমালোচনা হয়… তারাও এক পর্যায়ে বুঝতে পারবেন।”

প্রযুক্তি এখন আর বাক্সের মধ্যে বন্দি নেই, তা মানুষের হাতে হাতে, চিন্তার জগতে প্রবেশ করেছে মন্তব্য করে নূরুল হুদা বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হল- আমরা নির্বাচন কমিশন এখনও সেই ধানি ব্যাগ, সেই ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা ভ্যান দিয়ে নির্বাচনী সামগ্রী বহন করি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যেতে হয়। রাতে পাহারা দিতে হয়… কখন এসে বাক্সের মধ্যে ছিনতাইকারী ব্যালট পেপার ঢুকিয়ে দেবে এসব চিন্তা করতে হয়।”

সিইসির ভাষায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নির্ভর করবে আইন-কানুনের ওপর, প্রশিক্ষণের ওপর, মূল অংশীজন বিশেষ করে রাজনৈতিক দল বা তাদের সমর্থনের ওপর।

ইভিএম কিনতে ইসির প্রস্তাবিত প্রকল্পের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে কিনা- সে প্রশ্ন তোলাও অপরাধের কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“ইভিএমের টাকার দায়িত্বটা ইসির কাছে আসবে না- এটা নিশ্চিত করেই আমরা এগিয়েছি। এটার অর্থনৈতিক দিক রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। কোথাও যদি অপচয়, মিস ইউজ হয়- এসব মাথায় রেখে আমরা বিরত থেকেছি। আলাদাভাবে চিঠি দিয়ে এ দায়িত্ব সরকারের কাছে রাখা হয়েছে।”

সিইসি বলেন, ইভিএমের প্রাথমিক ব্যয় বেশি হবে যন্ত্রের দামের কারণে। তবে তখন ভোট গ্রহণে ‘হাজার রকম’ সামগ্রী প্রয়োজন হবে না। ভোট পরিচালনার জন্যে ৭০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় আইন শৃঙ্খলায়। ইভিএমে সেখানেও সাশ্রয় হবে। এসব মেশিন বারবার ব্যবহার করা যাবে।

অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ইটিআই মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মশালার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন।