ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।
বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে গত বৃহস্পতিবার নেপলের কাঠমান্ডু যান শেখ হাসিনা। ওই দিন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি। পর দিন যোগ দেন রিট্রিট সেশনে।
সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং ভুটানের সরকার প্রধান দাশো শেরিং ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সম্মেলন শেষে শুক্রবার তিনি ঢাকায় ফেরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এবারের বিমসটেক সম্মেলনের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এবং এর অব্যবহিত পূর্বে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সভা বাংলাদেশের জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
“নেপালের কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে আমার অংশগ্রহণ এবং শীর্ষ সম্মেলনের পূর্বের সভাসমূহে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে।”
গত দশ বছরে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যগুলো বিমসটেক সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় তুলে ধরার কথাও প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমসটেক অঞ্চলের দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত, সন্ত্রাসসহ অন্যান্য সমস্যাকে যৌথভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান তিনি তার বক্তৃতায় জানিয়েছেন।
“সামষ্টিক উন্নয়নের জন্য মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহায়তা, পুঁজি বিনিয়োগের উপরও জোর দিই এবং এ সকল প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল আইনি কাঠামো ও অন্যান্য আইনি দলিল দ্রুত সম্পন্ন করার উপর জোর দিই।”
বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর বিদ্যুৎ গ্রিডের মধ্যে আন্তঃসংযোগ চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, “এ চুক্তির মাধ্যমে বিমসটেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ চলাচলের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি।”
সম্মেলনের সাইডলাইনে নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ভুটানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাশো শেরিং ওয়াংচুকের এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার নানা দিকও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির সঙ্গে বৈঠককালে তিনি বাংলাদেশের প্রতি নেপালের ‘সুগভীর বন্ধুত্বের’ বিষয়টি তুলে ধরেন।
“আমি আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। বিবিআইএন-এর চলমান উদ্যোগের ব্যাপারে আমরা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করি।”
আঞ্চলিক সহযোগিতার স্বার্থে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর নেপাল ও ভুটানকে ব্যবহার করতে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “নেপালের প্রধানমন্ত্রী জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাংলাদেশের রপ্তানির ব্যাপারে নেপাল আগ্রহের কথা জানান। নেপালের সঙ্গে সম্প্রতি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও বাংলাদেশে আমদানি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
“এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য নেপালের সঙ্গে যৌথভাবে; ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ একসঙ্গে অথবা বাংলাদেশ নিজেই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে আমি তাকে অবহিত করেছি।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বৈঠকে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যে কোনো দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য আদর্শ হতে পারে বলে তিনি (নরেন্দ্র মোদী) মন্তব্য করেন। তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
“আমি বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানাই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ভবিষ্যতে বিমসটেক একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে। ”
শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই অনুপ্রেরণা থেকেই বিমসটেকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
বিকাল ৪টায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে জন্মষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান এবং এরপর নেপালে বিমসটেক সম্মেলন নিয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন।
লিখিত বক্তব্যের পর তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।