রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে চাপ দিতে নতুন কৌশল

আট মাস গড়িয়ে গেলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো অগ্রগতি দেখা না দেওয়ায় মিয়ানারকে চাপ দিতে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

নুরুল ইসলাম হাসিব জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2018, 11:17 AM
Updated : 25 August 2018, 11:17 AM

এই কৌশলের একটি হতে পারে ‘আইআইএম; যা সিরিয়া সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘে এই পদ্ধতিটি গৃহীত হয়েছিল। এর আওতায় যে কোনো ফৌজদারি অপরাধের ভবিষ্যত বিচারে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়।

২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব অনুসারে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল, ইমপার্শিয়াল অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট মেকানিজম (আইআইআইএম)’।

সিরিয়ায় ২০১১ সালের পর সংঘটিত ভয়ানক অপরাধের তদন্ত এবং জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর লক্ষ্যে সহায়তার জন্যই আইআইআইএম প্রতিষ্ঠা।

সিরিয়া প্রশ্নে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে দ্বিধাবিভক্তির মধ্যেই আইআইআইএম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মিয়ানমার প্রশ্নেও নিরাপত্তা পরিষদ দ্বিধাবিভক্ত।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানে দমন-পীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গাদের ঢল। কয়েক মাসেই শরণার্থীর সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়।

রাখাইনে অভিযানকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে মিয়ানমার তুলে ধরতে চাইলেও জাতিসংঘ একে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবেই দেখছে।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে ছিল চার লাখ রোহিঙ্গা। নতুন আসাদের নিয়ে এই সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে মিয়ানমার। তবে প্রত্যাবাসন শুরুর ক্ষেত্রে এখনও অগ্রগতি নেই।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ, আর এই শরণার্থীদের ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়টিতে জোর দিতে চাইছে বাংলাদেশ। কেননা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ নিশ্চিত হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না।

আর তাই বাংলাদেশ চাইছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টির সমাধান করতে এবং তাদের উপর নির্যাতনে যারা জড়িত তাদের যেন বিচার হয়।

সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সায় দিয়েছে যে, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করে যেভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে, তার বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে। যদিও মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়।

আইআইআইএম অবশ্য কোনো আদালত নয়, তারা কেবল সিরিয়ায় সংঘটিত অপরাধের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করবে।

আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে মিয়ানমারকে নিয়েও এই ধরনের কিছু একটি গঠনের তৎপরতা থাকবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধরণ পরিষদে বিশ্বের সব দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা থাকবেন। ওই সময় এরকম একটি মেকানিজম প্রতিষ্ঠায় আমরা তৎপরতা চালাব, যাতে মিয়ানমার চাপ অনুভব করে।”

এই ‘মেকানিজমের’ উদ্দেশ্য হবে, রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের মাধ্যমে যে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও মানবাধিকার খর্ব করা হয়েছে, তার তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা এবং তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে রাখা, যা বিচারের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

মিয়ানমার নানা অজুহাত দেখালেও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আশাবাদী।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের বছর পূর্তিতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ যে কমেনি, এটা ইতিবাচক।

আরও খবর