সোনার বাংলাকে ‘হেফাজতের’ প্রার্থনা ঈদ জামাতে

শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশার পাশাপাশি ‘সোনার বাংলার’ সুরক্ষা আর ‘ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলাকারীদের’ হেদায়েতের প্রার্থনা এসেছে বাংলাদেশের প্রধান ঈদ জামাতে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2018, 03:07 AM
Updated : 22 August 2018, 07:29 AM

ত্যাগের আহ্বান নিয়ে বুধবার বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব বাংলাদেশে পরিচিত কোরবানির ঈদ নামে। 

ঈদের দিন সকালে রাজধানীতে বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অফিস; রাতে কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টির পর সকাল থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা। তবে ঈদের নামাজের সময় বৃষ্টি ভোগান্তির কারণ হয়নি।   

বরাবরের মত এবারও ঈদের প্রধান জামাত হয়েছে ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, যেখানে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা, বয়সের লাখো মুসলমান।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে অংশ নেন।

ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ এহসানুল হক। নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করেন তিনি।

সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে দুই হাত তুলে তিনি বলেন, “হে আল্লাহ, সমস্ত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র থেকে তুমি সোনার বাংলাকে হেফাজত কর। যারা ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা করতে চায়, তাদের হেদায়েত দান কর।”

মোনাজাতে মৃত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া চাওয়ার সময় ঈদগাহে সমবেত অনেকেই কেঁদে ওঠেন।

পঁচাত্তরের পনের অগাস্ট ঘাতকের গুলিতে নিহত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া চান মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ এহসানুল। দোয়া চাওয়া হয় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যও।

এবার সব ঈদ জামাত ঘিরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যারা ঈদ জামাতে অংশ নিতে এসেছেন, তাদের যেতে হয়েছে তল্লাশির মধ্য দিয়ে।

জায়নামাজ আর ছাতা ছাড়া আর কিছু যাতে কেউ সঙ্গে না আনেন, সে বিষয়ে আগেই সবাইকে সতর্ক করেছিল পুলিশ। বরাবরের মতো জাতীয় ঈদগাহে ছিল নারীদের নামাজ পড়ার আলাদা বন্দোবস্ত।

বায়তুল মোকাররমে এবারও সকাল ৭টা থেকে পাঁচটি জামাতের আয়োজন হয়েছে। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদের নামাজ হয় সকাল সাড়ে ৭টায়।

পাড়ায় মহল্লায় মসজিদ আর ঈদগাহগুলোর সীমানা ছাড়িয়ে রাস্তায় ম্যাট ও জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে অংশ নিতে দেখা গেছে অগণিত মানুষকে।

দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে প্রতিটি জামাতে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন সবাই, যাতে বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলমানদের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।

এরপর ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন সবাই; বাড়ি ফিরে যোগ দেন পশু কোরবানির আয়োজনে। 

ঈদের জামাত শেষে কথা হয় শান্তিনগরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে। দুই সন্তান জুনায়েদ ও জাকেরকে নিয়ে তিনি জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার ঈদগাহ ময়দানে মানুষ কম হয়েছে বলে তার মনে হয়েছে।

“আমার দুটি ছেলে যেন সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে পারে, মনের ভেতরের পশুত্বকে কোরবানি দিয়ে তাদের মধ্যে যেন মনুষ্যত্ববোধ জেগে উঠে… আমার দুটি ছেলের মত হাজারো কোমলমতি শিশু যেন ভালো থাকে, সেই দোয়া করেছি।”

ব্যবসায়ী বদরুজ্জামান বলেন, “কোরবানির ফজিলতের মধ্যে দিয়ে সমাজ থেকে যেন সব কলুষতা দূর হয়, আজ আল্লাহর দরবারে সেই দোয়া করেছি।”

বৃদ্ধা মাকে নিয়ে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়তে এসেছিলেন বকশিবাজারের বাসিন্দা শায়লা শারমিন জেমি।

তিনি বলেন, “মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছি। পরিবারের সবার জন্য দোয়া চেয়েছি। সবাই যেন ভালো থাকে, পাশাপাশি আমার দেশটাও যেন ভালো থাকে, আল্লাহর কাছে সেই দোয়া চেয়েছি।”

মাস তিনেক আগে কুমিল্লায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়েছেন রায়েরবাগের বাসিন্দা জুবায়ের রহমান। ভাইয়ের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে করেই তিনি এসেছিলেন ঈদ জামাতে।

তিনি বলেন, “আল্লাহর কাছে বলেছি, আর কোনো বান্দার ঈদ যেন আমার মত না হয়।”