সেই শিক্ষারই প্রতিধ্বনী পাওয়া যায় জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের শহীদী ঈদ কবিতায়। তিনি লিখে গেছেন- ‘মনের পশুরে কর জবাই/পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই’।
ঈদে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কোরবানির মর্ম অনুধাবন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনায় সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ।
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন, কোরবানীর মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার।
বুধবার বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা; মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব বাংলাদেশে পরিচিত কোরবানির ঈদ নামে।
রাজধানীর লাখ লাখ বাসিন্দা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে গত কয়েকদিনে চলে গেছেন গ্রামে। ফলে ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা।
এবার বাসে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ তুলনামূলকভাবে কম হলেও ট্রেনে সূচি বিপর্যয়ের কারণে ঘরমুখো মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
ঈদযাত্রার মধ্যে দুর্ঘটনায় সোমবার একদিনেই সড়কে ঝরেছে ২৩ প্রাণ; ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার আরও অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বরাবরের মতো এবারও দেশে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, সকাল ৮টায়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই জামাতে নামাজ পড়েন।
বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে এবারও পাঁচটি জামাতের আয়োজন হয়েছে। প্রথম জামাতটি হয় সকাল ৭টায়। পর্যায়ক্রমে সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে পরের জামাতগুলো হওয়ার কথা।
ঈদের দিন সকালে নামাজের পর সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন পশু কোরবানি করতে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কার্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। অবশ্য এটা যে একটা চ্যালেঞ্জ, তা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন।
যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশ দূষণ এড়াতে এবার ১১টি সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই হাজার ৯৫৪টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬২৫টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫৪৯টি স্থান।
আবহাওয়া অফিস বলেছে, ঈদের দিন রাজধানী ছাড়াও রংপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বাগড়া দিতে পারে বৃষ্টি।
এবার কোরবানির পশুর হাটের শুরুতে বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকছেন বলে অভিযোগ ছিল ক্রেতাদের। ঈদের আগের দিনে এসে হঠাৎ দরপতানে বিক্রেতারা বলেছেন হতাশার কথা।
ঈদের বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, “আজহার অর্থ কুরবানি বা উৎসর্গ করা। কুরবানির মর্ম অনুধাবন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে আমাদের সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে। ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলেই প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি ও সৌহার্দ্য।”
আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ‘অনুপম ঐতিহ্যের’ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এই ঐতিহ্যকে সমুন্নত রেখে দেশ ও জাতির কল্যাণে তা কাজে লাগাতে হবে। সকল ধর্মের মূল বাণী হচ্ছে মানবকল্যাণ। তাই ধর্মের অপব্যাখ্যা করে স্বার্থান্বেষী মহল যাতে সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, “ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা দেয়। আসুন, আমরা সকলে পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
“আমি প্রত্যাশা করি, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের জীবনে সুখ ও আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে।”
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার শুভেচ্ছাবার্তায় আশা করেছেন-“ঈদুল আজহার ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষ মনের সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ, সংকীর্ণতা, কুটিলতা পরিহার করে বয়ে আনবে অনাবিল সুখ, শান্তি ও পবিত্রতা। ঈদুল আজহার পবিত্রতা রক্ষায় মুসলমানরা আরও বেশি ত্যাগের মাধ্যমে উত্তম জীবন-যাপন করবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মী, বিচারক ও বিদেশি কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
বিগত বছরগুলোতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও আয়োজন করে সবার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ে এখন তিনি কারাগারে।
খালেদার অনুপস্থিতিতে ঈদের দিন সকাল সাড়ে ১১টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি। তবে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা।
ঈদ উপলক্ষে বুধবার সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ইতোমধ্যে সাজানো হয়েছে মনোরম সাজে। রাতে থাকছে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল,কারাগার,সরকারি শিশু সদন,ছোটমনি নিবাস,সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র,আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে ঈদের দিন।
ঈদ উপলক্ষ সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যালেনগুলো কয়েকদিন ধরে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠান। সংবাদপত্রগুলোও এ উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।
ঈদের উৎসবের জন্য রাজধানীসহ দেশের বিনোদনকেন্দ্রগুলো নতুন করে সেজেছে।