মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী, সায়েদবাদ এলাকার বাস টার্মিনালগুলোতে ঘুরে যাত্রীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সকালে কল্যাণপুরে গিয়ে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গগামী বাসগুলো আগাম টিকেট বিক্রি করায় ঈদের আগের দিন সেখানে উপচে পড়া ভিড় নেই। কাউন্টারগুলোর বিশ্রামাগারে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন টিকেট নিশ্চিত করতে পারা যাত্রীরা।
তবে যারা আগে টিকেট না কেটে তাৎক্ষণিক বাড়ি ফেরার তাড়া নিয়ে স্টেশনে এসেছেন, তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া দাবি করছে কোনো কোনো পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম থেকে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের সরাসরি বাস না পেয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামের বাসে সকালে কল্যাণপুরে আসেন মোবাইল মেকানিক সবুজ ও ফরহাদ। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কয়েকটি টিকেট কাউন্টারে ঘুরেও সৈয়দপুরের বাসের টিকেট পাননি তারা।
“শ্যামলী কিংবা হানিফ পরিবহনের টিকেটের অপেক্ষায় আছি। কিছু লোকাল বাস দ্বিগুণের বেশি দামে টিকেট বিক্রির জন্য হ্যান্ডমাইক হাঁকাচ্ছে। কিন্তু এসব বাসের কোনো ভরসা নেই।”
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার বাবুল মিয়া জানান, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গন্তব্যের টিকেট আগেই বিক্রি করে রেখেছেন তারা। ফলে মঙ্গলবার আর টিকেট বিক্রির ঝামেলা নেই। যাত্রীদেরকে সঠিক বাস ধরিয়ে দেওয়াই এখন তাদের কাজ।
বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাশে এবং সাভার গাবতলী এলাকায় কিছুটা যানজট থাকায় গাড়িগুলো অনেক ক্ষেত্রে ২-৩ ঘণ্টা দেরি করছে বলে জানান তিনি।
সকালে কল্যাণপুর থেকে রংপুরের যাত্রী নিয়ে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিআরটিসির একটি সিটিবাস। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে তারা আদায় করছিল ১২০০ টাকা।
ওই বাসের এক সহকারী বলেন, “বিশেষ দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় বাস ছাড়বে। তাই ভাড়াটা একটু বেশি। আসার সময় গাড়িতো ফাঁকা আসবে।”
কল্যাণপুরে যাত্রীদের ভিড় কম থাকলেও গাবতলী টার্মিনালে নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।
সাভার-নবীনগর এলাকায় যানবাহনের জটে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে এই পথের যাত্রীদের।
পাবনা এক্সপ্রেসের বাস চালক সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাটুরিয়া ফেরিঘাট, সাভার-নবীনগর, এলেঙ্গাসহ কয়েকটা স্পটে যানজট আছে। পাবনায় একবার যেতেই লেগেছে ১১ ঘণ্টা।
ভাড়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “গাবতলী থেকে পাটুরিয়া যেতে অনেকে ২০০ টাকা করে নিচ্ছে। আবার সাভার থেকে পাটুরিয়া যেতে নিচ্ছেন চারশ টাকা করে। যে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছে নিচ্ছে। সাভারে অনেক গার্মেন্টস ছুটি হইছে। তাই যাত্রীর চাপ বেশি, ভাড়াও বেশি।”
ঈশ্বরদী এক্সেপ্রেসের যাত্রী শামীম বলেন, সকাল সাড়ে ৭টায় তাদের বাস ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যানজটের কারণে ঢাকায় ফিরতে ওই বাস দেরি করে ফেলেছে। ফলে ঢাকা থেকে আবার রওনা হয়েছে বেলা ১১টায়।
টাঙ্গাইলের যাত্রী শাহরিয়ার আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টাঙ্গাইলের প্রায় সব বাসই আজ বেশি ভাড়ায় যাচ্ছে। অন্য সময় ২২০ টাকা ভাড়া রাখলেও আজ নিচ্ছে আটশ টাকা। উপায় না থাকায় এই টাকা খরচ করেই বাড়ি যাচ্ছি।”
দুপুরে মহাখালী টার্মিনালে যাত্রীদের বেশ ভিড় দেখা যায়। এই টার্মিনালে সৌখিন, আলম এশিয়াসহ অন্যান্য পরিবহনগুলো চারশ টাকা থেকে পাঁচশ টাকায় যাত্রী বহন করছে।
তবে এনার কাউন্টার ব্যবস্থাপক উজ্জ্বল বললেন, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে তারা আগের মতই ২২০ টাকা করে রাখছেন। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের ৪৭টি বাস ছেড়ে গেছে।
রাজধানীর সায়েদাবাদ ও টিটিপাড়া থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যের বাস ছেড়ে যায়।
তবে ঈদযাত্রার শেষ দিনে অন্যান্য টার্মিনালের মতো ভিড় দেখা যায়নি সায়েদাবাদে। যাত্রীরা অন্য সময়ের মত এদিন কাউন্টারে এসে তাৎক্ষণিক টিকেট সংগ্রহ করে গন্তব্যে গেছেন।
এর মাঝেও নোয়াখালীগামী হিমাচল পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নিতে দেখা যায়। ৩৫০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকায় টিকেট বিক্রি করছিলেন এই কাউন্টারের কর্মীরা।
এই পরিবহনের কাউন্টারের কর্মীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে নোয়াখালীগামী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। তবে আসার সময় আসতে হচ্ছে ফাঁকা।
“যাত্রী না পেলেও আমাদের বাসগুলো দ্রুত ঢাকায় চলে আসছে। যাত্রীরা পর্যপ্ত বাস পেয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে।”
সায়েদাবাদে সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সোহেল বলেন, ঈদ উপলক্ষে তাদের সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটের টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। সায়েদাবাদ থেকে দেওয়া হচ্ছে কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টিকেট। ঈদ উপলক্ষে দাম বাড়ানো হয়নি।
একই কথা বলেন সৌদিয়া পরিবহনের টিকেট ব্যবস্থাপক সুমন।
“চট্টগ্রামে আমাদের নিয়মিত ভাড়া নন এসি ৪৮০ টাকা এবং এসি ৭০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে দাম বাড়ানো হয়নি। অনলাইনে টিকেট বিক্রি হয়েছে। যাত্রীরা কাউন্টারে এসেও টিকেট সংগ্রহ করছেন।”