মুক্তিযোদ্ধা কোটা: মতামত দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়ে মতামত দিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2018, 02:09 PM
Updated : 20 August 2018, 02:09 PM

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জিজ্ঞাসায় তিনি কী মতামত দিয়েছেন- সে বিষয়ে কিছু বলেননি অ্যাটর্নি জেনারেল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার কাছে কোটা বিষয়ে আদালতের রায় নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছিল। মতামত চূড়ান্ত করার পর জনপ্রশাসন কর্মকর্তাকে এসে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। তিনি আজ (সোমবার) বিকালে এসে নিয়ে গেছেন।”

কী মত দিয়েছেন জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “কোটা থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আমি কেবল আদালতের রায়ের আলোকে মতামত দিয়েছি।”

এর আগে গত বৃহস্পতিবার অ্যাটর্নি জেনারেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তার মতামত চাওয়া হয়েছে। সোমবারের মধ্যে মতামত দেওয়া হবে।

২০০৯ সালে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ ৫৭ বছর থেকে দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করার আদেশ জারি করেছিল। এর পরের বছর তা আইনে সংযোজন করা হয়। পরে ২০১১ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়।

তখন সরকারের এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে এবং সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স দুই বছর বাড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে বিসিএস খাদ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন সিকদার রিট করেন।

তার রায়ে আদালত নির্দেশনা দেয়, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা ‘কঠোরভাবে’ সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে যদি কোটা পূরণ করা না হয় তবে সংশ্লিষ্ট পদ শূন্য রাখতে হবে।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার লিভ টু আপিল করলে তখনকার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১৫ সালে হাই কোর্টের দেওয়া পর্যবেক্ষণের ‘কোনও ক্ষেত্রে যদি কোটা পূরণ করা না হয় তবে সংশ্লিষ্ট পদ শূন্য রাখতে হবে’ অংশটি বাদ দিয়ে বাকি মূল রায় বহাল রাখে।

ইন্দোনেশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে মুক্তিযোদ্ধা বা জাতীয় বীররা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়, তা উল্লেখ করে হাই কোর্ট ওই রায় দিয়েছিল।

মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সরকারি পরিবহন সেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল সেখানে। ভারতে যে সুবিধা মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া হয়, তাও ওই রায়ে উল্লেখ করা হয়েছিল।

কিন্তু এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলে রাষ্ট্রপক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পরিবহন সেবা দেওয়ার বিষয়টির বিরোধিতা করে।

ওই লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পরিবহন সেবার বিষয় দুটি বাদ দিয়ে দেয়।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবিতে কয়েক মাস আগে জোরাল আন্দোলন গড়ে তোলে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’, যা ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল সংসদে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতিই আর রাখা হবে না।

তবে পরে সংসদে তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখতে হাই কোর্টের রায় আছে।

এদিকে নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধার প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গত ২ জুন একটি কমিটি করে সরকার।

কমিটির নেতৃত্বে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গত ১৩ অগাস্ট সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারি চাকরির কোটা ‘যতটা সম্ভব’ তুলে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করবেন। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটার বিষয়ে যেহেতু আদালতের রায় আছে, সেহেতু এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ‘মতামত’ নেওয়া হবে।

“সরকার কোর্টের কাছে মতামত চাইবে যদি কোর্ট এটাকেও ইয়ে করে … দেয় তাহলে কোটা থাকবে না। আর কোর্ট যদি বলে ওই অংশটুকু সংরক্ষিত রাখতে হবে, তাহলে ওই অংশটুকু বাদ দিয়ে বাকি সবটা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।”