সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর, মোহাম্মদপুরের কামারপট্টিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কামারেরা ছুরি-চাপাতি তৈরি আর ঝালাইয়ে পাশাপাশি ক্রেতাদের সামলাতে পার করছেন ব্যস্ত সময়।
কামাররা বলছেন, কোরবানির আগে এই সময়টার জন্য তারা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন। আর এবার বিক্রি যা হচ্ছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট। ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার বিকিকিনি আরও বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।
কামারপট্টিতে স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে কাঠপট্টিতে খুচরা দোকান বসিয়েছেন ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ঈদে খুচরা বিক্রি বেশি হয়। সে কারণে মূল দোকানের বাইরে এ দোকান দিয়েছি। সামনে তো কাস্টমার আরও বাড়বে, বিক্রি যাতে বেশি করতে পারি সেজন্যই আরেকটা দোকান বাড়ানো।”
লতিফ জানান, কেজি দরে এক একটি চাপাতি ৫০০ টাকা, বটি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
“একেকটা চাপাতি এক কেজি-দেড় কেজিও হয়। বটির ওজনও প্রায় একই রকম। যারা বড় কোরবানি দেয় তারা বড়গুলো নেয়, আর অনেকে সাধারণগুলো নেয় একটু কম দামে।”
বিক্রেতারা জানান, ছোট ছুরি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় ছুরি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ৭০ থেকে ১২০ টাকা, দা ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের আগের রাত পর্যন্ত বিক্রি জমজমাট থাকবে বলে আশা করছেন মায়ের দোয়া হার্ডওয়ারের বিক্রেতা আলমগীর হোসেন।
আলমগীর জানান, আকার ও লোহার মান ভেদে ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা দামের বড় ছুরি আছে তার দোকানে। আর জবাই করার ছুরির দাম ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
কামারপট্টিতে চাপাতি কিনছিলেন কারওয়ানবাজারের ফল বিক্রেতা আসলাম। তিনি ঈদ করবেন গাজীপুরে গ্রামের বাড়িতে। বাড়ি যাবেন ঈদের আগের রাতে। তার আগে ‘টুকটাক’ কেনাকাটার মধ্যে এই চাপাতি কেনা।
রাজাবাজারের ফরহাদ হোসেন কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার প্রায় সব ধরনের সামগ্রী কেনার কথা জানালেন।
তিনি বলেন, “প্রতি বছরই টুকটাক কিনতে হয়। এবার একা কোরবানি দিচ্ছি। তাই নতুন সব কিনে নিলাম।”
ইরানি ক্যাম্পের লোহাপট্টির কামার ইদ্রিস আলী বলেন, সারা বছর তারা এ সময়টার অপেক্ষাতেই থাকেন।
“সারা বছর তো তেমন কাজ পাই না। আমাগো টার্গেটই থাকে কোরবানীর ঈদ। গরু কাটাকাটি করবে। গোশত কাটতে তো ছুরি, চাপাতি, বটি লাগবেই। কোরবানির আগে পুরো বছরের চেয়ে বেশি লাভ হয়।”
ইদ্রিস বলেন, রোববার রাতেও তার দোকানে কাজ চলেছে ৩টা পর্যন্ত। আর ঈদের আগের রাতে কাজ চলবে সারা রাত। শেষ সময়ে অনেকে পুরনো ছুরি বটি ধার দিতে আনবেন। সেখান থেকেও পয়সা আসে, তাই কাউকে তারা ফিরিয়ে দেন না।
মিল্লাত ক্যাম্পের কামারপট্টির দোকানি শরফুদ্দিনও দা-ছুরিতে ধার দিয়ে কুলাতে পারছেন না।
শরফুদ্দিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন লোহার ছুরি, চাপাতি, বটি।
তিনি বলেন, “কোনোটা কেজি দরে বিক্রি করি, আবার কোনাটা পিস হিসাবে। একেকটার একেক রকম রেট।”
চাপাতি ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, ছুরি ১০০ থেকে ২০০ টাকা, ছোট বটি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বড় বটি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান শরফুদ্দিন।
মিল্লাত ক্যাম্পে ছুরি, চাপাতি কিনতে আসা রাকেশ হোসেন বলেন, “এখন তো ওদের অনেক ডিমান্ড। দামও এক দেড়শো টাকা বেশি নিচ্ছে। কিছু তো করার নাই, নিতেই হবে। ছুরি, চাপাতি ছাড়া তো গরু কাটার উপায় নাই।”
তবে নতুন অর্ডার নেওয়ার চেয়ে ধার দেওয়ার কাজই বেশি করছেন তোতা। তাতে লাভও থাকছে বেশি।
“একটা বটি বিক্রি করলে বেশি হলে ৫০/৬০ টাকা লাভ হয়। কিন্তু ধার দিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা নিই। তাতে লাভটা থাকে বেশি। আমরা তো সারা বছর এই সময়টার আশায় থাকি। এই লাভ দিয়া সারা বছর চলতে হয়।”
ছোট ছুরি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বটি-চাপাতি ১০০ থেকে ২০০ টাকায় ধার করে দিচ্ছেন বলে জানান তোতা।
এদিকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরেও অনেক বিক্রেতা ছুরি-বটি-চাপাতি ধার করে দিচ্ছেন। ‘ছুরি ধার করাই, বটি ধার করাই’ হাঁক দিতে দিতে ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন তারা।