বেশি ভিড়ের দিনে ট্রেনে ভোগান্তিও বেশি

ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে প্রবল ভিড়ের মধ্যে ট্রেনের অপেক্ষায় দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2018, 07:13 AM
Updated : 20 August 2018, 12:30 PM

সোমবারও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটের ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরি করে স্টেশনে এসেছে, ফলে সেগুলো ছেড়ে যাচ্ছে আরও দেরি করে। প্রতিটি ট্রেনেই দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়।

রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্ল্যাটফর্মে এসে বেলা ১টার দিকে স্টেশন ছেড়ে যায়।

আর লালমনি ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল বেলা সোয়া ৯টায়। যাত্রী বোঝাই করে বেলা পৌনে ৩টায় প্ল্যাটফর্ম ছাড়ার পর দুইশ গজ গিয়ে আবার ফিরে আসে ট্রেনটি।

রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ট্রেনের ছাদ থেকে কিছু যাত্রী নামিয়ে দিলে ৩টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ছেড়ে যায়।

রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা সকাল ৬টায়। প্রায় তিন ঘণ্টা দেরি করে বেলা ৮টা ৫০ মিনিটে কমলাপুরে পৌঁছানো পর বেলা সোয়া ৯টায় যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি কমলাপুর ছাড়ে।

এছাড়া সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটের পরিবর্তে বেলা সাড়ে ৮টায়; দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল পৌনে ৯টায় জায়গায় সোয়া ৯টায়; চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টার জায়গায় চার ঘণ্টা দেরি করে বেলা ১২টায় ঢাকা ছাড়ে।

দেওয়ানগঞ্জের তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টার পরিবর্তে ছেড়ে যায় সাড়ে ৯টায়। তবে দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস খুব বেশি দেরি করেনি। বেলা ১০টার বদলে ট্রেনটি রওনা হয়েছে ১০টা ১০ মিনিটে।

ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় ভাদ্র মাসের গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের।

রংপুর এক্সপ্রেসের জন্য স্টেশনে অপেক্ষায় ছিলেন আরামবাগের একটি প্রিন্টিং কারখানার মালিক মোকসেদুল ইসলাম। ঈদ করতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুরে যাচ্ছেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “টেন ছিল ৮টায়। সকাল থেকে বসে আছি, ট্রেনই আসে না। একটু আগে জানালো ট্রেন নাকি সাড়ে ১২টায় ছাড়বে। কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না।”

মোকসেদুল বলেন, “প্রতি ঈদে টিকেট কাটতে দীর্ঘ ভোগান্তি, আবার ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা…। বাড়ি থেকে ফেরার পথেও ভোগান্তি। মনে হয় আমাদের উত্তরের মানুষের জন্যই সব কষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।”

স্টেশনে পৌঁছাতে যানজটে পড়ার ভয়ে জিগাতলার বাসিন্দা সেলিনা বেগম স্বামী-সন্তানের সঙ্গে কমলাপুরে এসে বসে আছেন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে। তারা যাবেন লালমনিরহাটে; কিন্তু সোয়া ৯টার লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মে আসেনি।

প্ল্যাটফরমের একপাশে কাগজ বিছিয়ে বসে থাকা সেলিনা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, গতবার বাসে গিয়ে কষ্টে পড়তে হয়েছিল। এজন্য এবার ট্রেনের টিকেট কেটেছেন। কিন্তু ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি।

“গতবার ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে ২৩ ঘণ্টা লেগেছিল। বাসেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এজন্য ট্রেনে যাইবার চাইলাম। কিন্তু এইখানেও একই অবস্থা।”

স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে সকাল থেকে কমলাপুরে অপেক্ষা করছেন উত্তর শাহজাহানপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা আশরাফুল আলম। তার রংপুর এক্সপ্রেস বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত স্টেশনে আসেনি।

“১০ তারিখ বিকালে স্টেশনে টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে ১১ তারিখ দুপুরে পেয়েছি। কিন্তু এখন আবার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আসলে আমাদের ওই দিকে ট্রেনের সংখ্যা না বাড়ালে সমস্যার সমাধান হবে না। দেখেন আমাদের রংপুরের কত যাত্রী। কিন্তু সারা দিনে যায় মাত্র একটা ট্রেন।”

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় যাওয়ার জন্য সকাল ৮টার নীলসাগর এক্সপ্রেসের টিকেট কিনেছিলেন সংবাদকর্মী জয়শ্রী ভাদুড়ী। সেই ট্রেন স্টেশনে আসে বেলা পৌনে ১২টায়। তারপর ভিড় আর হুড়োহুড়ি পেরিয়ে ট্রেনে উঠতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাকে।

“ট্রেনের কামরা আগে থেকেই লোকজনে ভর্তি। রেলওয়ের একজনের সহায়তায় কোনোমতে উঠতে পেরেছি। এখন ভেতরে ভয়াবহ রকমের গরম। অসুস্থ লোক থাকলে আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।”

স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী জানান, সোমবার সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৫টি ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে গেছে।

ট্রেন ছাড়তে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। এ কারণে ট্রেনগুলো দেরিতে পৌঁছায়। ফলে সেগুলো আসতেও দেরি করে। এ কারণে উত্তরবঙ্গের ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখা যাচ্ছে না।”

এ সমস্যার সমাধান করতে হলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ডাবল লাইন করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।