তবে সোমবার থেকে বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এর ফলে তাপপ্রবাহ প্রশমিত হয়ে কমবে গরমের তীব্রতা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই বৃষ্টি থাকতে পারে। এ সপ্তাহের ২২ অগাস্ট সারা দেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা।
এদিকে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, রোববার রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
এদিন সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাওয়ে। রাজধানীতে তাপমাত্রা উঠেছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বর্ষা মৌসুমে গত ১৯ জুলাই ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওইদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রংপুরের রাজাহারহাটে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “রোববারও অনেক জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। তাতে তাপমাত্রা কমছে। সোমবারও ঢাকাসহ অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ধীরে ধীরে তাপপ্রবাহ কমবে। এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।”
সোমবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এতে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য কমবে।
সাগরে ৩ নম্বর সতর্কতা
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঠাকুরগাঁওয়ে আবহাওয়া অফিস নেই; আমরা আমাদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছি। তীব্র গরমে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।”
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন রিকশাভ্যান চালক আর খেটে খাওয়া মানুষ। দাবদাহ থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের ছাতা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে।
শহরের চৌরাস্তায় রিকশাচালক নূর আলম বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে রিকশা চালানো খুব কষ্টকর হয়ে গেছে। গরমের কারণে শহরে মানুষের চলাচল কমে থাকায় যাত্রীও খুব কম।
শহরের রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সেলিম বলেন, “এমন তীব্র গরম এর আগে অনুভূত হয়েছে বলে মনে পড়ে না। বিদ্যুৎ না থাকায় অবস্থা আরও খারাপ।”
তীব্র গরমে নানা রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তীব্র গরমের সঙ্গে বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ আর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার স্বদেশ কুমার ঘোষ জানান, পিক আওয়ারে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ২৮/৩০ মেগাওয়াট। তার ওপর লো ভোল্টেজের সমস্যা আছে।
তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়ার ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় বৃহত্তর রংপুরের আট জেলায় একই সমস্যা বিরাজ করছে। কুড়িগ্রামে এই সমস্যা আরো প্রকট।
তীব্র গরমে মাঠে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমনের আবাদও পড়েছে হুমকির মুখে।
কৃষকরা বলছেন, ঘন ঘন সেচ দিতে গিয়ে আমন আবাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
গরমের কারণে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, রোববার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।