কমলাপুরে ট্রেনের অপেক্ষা

ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে আগের দিনের মতই অধিকাংশ ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশ খানিকটা দেরিতে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2018, 05:58 AM
Updated : 19 August 2018, 01:19 PM

যাত্রীদের অনেকে ট্রেনের ছাদে চড়ছেন। ইঞ্জিনের সামনে, দরজার হাতলে ঝুলেও বাড়ির পথ ধরেছেন অনেকে। এই ভিড়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা মিলিয়ে বিড়ম্বনা সঙ্গে নিয়েই চলছে ঈদযাত্রা। 

রোববারের ট্রেনের সূচি অনুযায়ী সকাল ৬টায় কমলাপুর থেকে দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি ছেড়ে যায় এক ঘণ্টা দেরিতে, সকাল ৭টার পর।

খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ে।

চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা, তবে ট্রেনটি স্টেশনেই আসে বেলা ১০টা ৫ মিনিটে; ছেড়ে যায় ১০টা ৫৫ মিনিটে। সকাল ৯টার রংপুর এক্সপ্রেস বেলা সাড়ে ১১টায় ছেড়ে যায়।

দিনাজপুরের এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি পৌনে ১১টায় কমলাপুরে এসে বেলা ১১টায় স্টেশন ছেড়ে যায়।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন লাল মনি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীরা। সকাল সোয়া ৯টার এই ট্রেন ছয় ঘণ্টা দেরি করে বেলা সোয়া ৩টায় ছেড়ে যায়। 

ঢাকা-চিলাহাটি রুটের নীলসাগর ট্রেনের কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা সকাল ৮টায়। দুই ঘণ্টা ৫ মিনিট দেরি করে বেলা ১০টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি কমলাপুরের প্ল্যাটফর্মে আসে। দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা ট্রেনে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করেন।

যাত্রীদের ভিড়ে ট্রেনের দরজা দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ঢুকতে পারছিলেন না বাড্ডার একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক ফরিদ আহমেদ। উপায় না দেখে, স্ত্রীকে জানালা দিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে দেন তিনি। অনেক কসরত করে পরে নিজে ওঠেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দরজায় যে ভিড়, ধাক্কাধাক্কি করে উঠতেই পারতাম না। কি আর করব… ট্রেন ঠিক সময়ে এলে এই ঝামেলাটা হত না। এতক্ষণে হয়তো বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে যেতাম।”

রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত সেটি স্টেশনে আসেনি।

এই ট্রেনের যাত্রী এমদাদ উল্লাহ স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্টেশনে এসে বসে আছেন সকাল ৭টা থেকে।

ট্রেন ঠিক সময়ে না আসায় বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, “প্রতি ঈদেই রংপুর এক্সপ্রেস দেরি করে, আর আমাদের এই দুর্ভোগ হয়। সকাল থেকে বসে আছি, গরমে অস্থির লাগছে।”

লালমনিরহাটের ঈদ স্পেশাল ট্রেনে বগুড়ায় যাবেন চট্টগ্রামের স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। শনিবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে এক আত্মীয়র বাসায় ছিলেন। রোববার বেলা ৮টায় স্টেশনে এসে বসে থাকলেও ১১টা পটর্যন্ত ট্রেনের দেখা পাননি।

রফিকুল বলেন, “সঙ্গে বাচ্চারা আছে। তারা খুব কষ্ট পাচ্ছে গরমে। সোয়া ৯টায় ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনও ট্রেন আসেইনি। কখন আসবে তাও কেউ বলতে পারছে না।”

ট্রেন দেরি করলেও বাড়ি যেতে পারছেন, এতেই খুশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌসী নুজুলা। দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসের জন্য কমলাপুরে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

“আমাদের ট্রেনের সংখ্যা তো কম। এজন্য এটুকু কষ্ট মেনে নিতেই হবে। বাড়ি যেতে পারছি এটাই তো অনেক বেশি। আসলে ঈদের সময় ছাড়া ট্রেন কিন্তু ঠিক মতোই ছাড়ে। সমস্যা হয় না।”

রাজশাহীর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস বেলা ৩টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

প্রিয়জনের সঙ্গে কোরবানির ঈদের ছুটি কাটাতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। শনিবার ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় যাত্রীরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, শনিবার তেজগাঁওয়ে একটি ট্রেন এক ঘণ্টা আটকে থাকায় অন্য ট্রেনগুলো দেরি করেছে।

“গতকাল যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় অন্য ট্রেনগুলো ছাড়তে দেরি হয়েছে। সেগুলো ফিরতেও দেরি হয়েছে।”

এছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীর চাপেও ট্রেন যেতে দেরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঈদের সময় যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। প্রতিটি স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামায় সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লাগে। যে কারণে ট্রেনগুলো গন্তব্যে দেরি করে পৌঁছায়। সেখান থেকে ফিরতেও দেরি হয়।”

এদিকে দেরি করে আসা ট্রেনে ওঠার সময় হুড়োহুড়ির মধ্যে যাত্রীদের জিনিসপত্র চুরি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

রংপুর এক্সপ্রেসে এসি কেবিনের যাত্রী শায়লা জোবায়ের শম্পা অভিযোগ করেন, তার ভ্যানেটি ব্যাগ থেকে স্মার্টফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর ট্রেন স্টেশনে এলে সবার মধ্যে ওঠার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়। তখনই কোনো এক ফাঁকে তার ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র খোয়া যায়।

 “ট্রেনে ওঠার আগেও ফোনে কথা বলেছি। প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে চেয়ারে বসতে না বসতেই দেখি ব্যাগের ভেতর আরেকটি পার্সে রাখা মোবাইল, টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, এটিএম কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিষপত্র হাওয়া। ট্রেনের করিডোরেই কোথাও চুরি হয়েছে।'' 

একই ট্রেনে রংপুরগামী আরেক নারী তার পার্স থেকে মোবাইল ও চার হাজার টাকা খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করেন।

বেলা ৩টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ  জাবেদ পাটোয়ারী। 

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ট্রেন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২২০০ পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।

বাস্তবতার নিরিখে অনেক সময় ট্রেনের ছাদে যাত্রী ওঠা ঠেকানো যায় না মন্তব্য করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন,  “ইজতেমার সময় যাত্রীদের জন্য ট্রেন দেখাই যায় না। তখন কি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন যে যতটা সিট আছে ততজনই বসবে? সেই সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এ সময় যাত্রীদের যাত্রাটাকেই প্রাধান্য দিতে হয় আমাদের।”

ঈদের ছুটিতে প্রায় এক কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালোই চলছে। তবে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে স্রোতের কারণে ফেরি পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।”