শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি হাট ঘুরে বিক্রেতাদের হাঁকডাকই বেশি দেখা গেছে। ক্রেতাও আসছেন, তবে সংখ্যায় কম। হাট ঘুরে পশু দরদামও করছেন। পুরোদমে বেচাকেনা আরও দুই-একদিন পর শুরু হবে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরপোরেশন এলাকায় ১৩টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০টি হাট বসছে।
কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের খালি জায়গা এবং ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের পাশের খালি জায়গা ইজারা দেয়নি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেখানে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট বসবে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে ১০টি গরু নিয়ে আসা হাসিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গরুগুলো তিনি নিজে পুষেছেন।
“আমি গতবারও এই হাটে আসছিলাম। দাম ভালো পাইছিলাম। এইবারও এই হাটে আলাম (আসলাম)।”
আলমডাঙ্গা থেকে আসা আরেক বিক্রেতা মাহবুবুর রহমান এবার বিক্রির জন্য ৩০টি গরু এনেছেন হাটে। তিনি গতবছর কমলাপুর হাটে গরু বিক্রি করেছিলেন।
শুক্রবার ভোরে হাটে আসা এই বিক্রেতা বলেন, “গতবার প্রত্যাশিত দাম না পেলেও এবার ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
“গতবার হাটে গরু বেশি ছিল। সে কারণে দাম ভালো পাইনি। কিন্তু এবার গরু গতবারের চেয়ে কম। ইন্ডিয়ান গরু না আসলে দাম ভালো পাব।”
এবার হাটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে এই হাটে আসা আক্কাস আলী অভিযোগ করে বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোরে আসার পর পুলিশ হাটে গরু নিয়ে ঢুকতে দেয়নি। পরে গরু ঢোকালেও বিরক্ত করেছে।
কমলাপুর হাটের সার্বিক প্রস্তুতি এখনও শেষ হয়নি। পুরো হাটে এখনও শেষ হয়নি সামিয়ানা টানানো। ফলে প্রখর রোদে পশুগুলো কষ্ট পাচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন বিক্রেতা ইদ্রিস আলীর।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে আসা ইদ্রিস বলেন, “অহনও শেড দেয় নাই। রইদে আমাগের জীবনই বাইর অয়া যাইতেছে। রইদে অবলা গরুগুলান খুব কষ্ট পাচ্ছে। ক্লান্ত হইয়ে যাচ্ছে।”
কমলাপুর হাটে ঘুরে ঘুরে কোরবানির পশু দেখছিলেন ফারুক হোসেন। তিনি জানান, বাড়ির পাশে হাট তাই দেখতে এসেছেন।
“দেখি কেমন গরু উঠছে। পছন্দ হলে, পরতায় পড়লে কিনেও ফেলতে পারি।”
শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠে শুক্রবারও কোরবানির পশু আসছে। সেখানে গরু দেখতে এসেছেন বাসাবোর বাসিন্দা তানভির হাসান।
দনিয়া হাটে ঘুরে প্রচুর গরু দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশের খুঁটিতেও গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। ট্রাকে করে গরু এনে নামানো হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে ১৪টি দেশি গরু নিয়ে এই হাটে এসেছেন আবদুস সাত্তার। তিনি জানালেন, আরও দুই ট্রাকে করে গরু আসবে তার।
“আমারগুলান বেবাক দিশি গরু। কাইল সন্ধ্যায় রওনা হইছি। আইজ ভোরে নাইমলাম। গতবারের চেয়ে তো বেশি দামে গরু কিনিছি। এইখানে ক্যামন দাম পামু বুইজবার পারি না। দেহি কি অয়।”
“আমরা কষ্ট করে গরু পালি। ঈদের সময় ইন্ডিয়ার গরু আইসা দাম কমাইয়া দেয়। এইবার যেন তা না হয়। কারণ কৃষকের লাভ হলে সে বিনিয়োগ করবে। গরুর উৎপাদন বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে দেশেরই লাভ।”
এবার গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মিলিয়ে দেশে এক কোটি ১৬ লাখ ‘কোরবানিযোগ্য’ পশু রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। এসব গবাদিপশুর মধ্যে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার গরু ও মহিষ এবং ৭১ লাখ ছাগল ও ভেড়া রয়েছে।
আগামী ২২ অগাস্ট বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে।
ঢাকার কোরবানির পশুর হাট
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার মেরাদিয়া, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠের পাশের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, কামরাঙ্গীরচরের বুড়িগঙ্গার পাশের খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের কাছের জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ পশুর হাটের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের গাবতলী, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের দুই নম্বর ব্রিজের পাশের খালি জায়গা, খিলক্ষেত ৩০০ ফুট সড়কের উত্তরপাশে বসুন্ধরা হাউজিংয়ের খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কের পাশে পুলিশ লাইন্সের খালি জায়গা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএসের পাশে সেতু প্রোপার্টিজের খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদ নগর হাউজিংয়ের খালি জায়গায় বসচে পশুর হাট।
আরও খবর