রেলওয়ের ঈদযাত্রার প্রথম দিন সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন নীলসাগর, তিস্তা এবং একতা এক্সপ্রেসে ভিড় ছিল অন্য ট্রেনের তুলনায় বেশি।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা দশটা পর্যন্ত কমলাপুর থেকে ১৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে খুলনাগামী সুন্দরবন সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি সকাল সাড়ে ৭টায় স্টেশন ছেড়ে যায়।
চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টার পরিবর্তে ৮টা ৫০ মিনিটে এবং দেওয়ানগঞ্জের তিস্তা এক্সপ্রেস সাড়ে ৭টার পরিবর্তে সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যায়।
তবে দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস, রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস ঠিক সময়েই ছেড়েছে।
“আজকেই ট্রেনে অনেক ভিড়। আজকের পর ট্রেনে ভিড় আরও বেশি হবে। এ কারণে অফিস থেকে দুই দিনের ছুটি বেশি নিয়েছি।”
সকাল ১০টায় দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া একতা এক্সপ্রেসে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন মিরপুরের গৃহিনী শারমিন আক্তার স্বর্ণা।
“আমার শ্বশুরবাড়ি সাতক্ষীরা। গত ঈদে সেখানে গিয়েছিলাম। এবার দিনাজপুরে বাবার বাড়িতে ঈদ করব। এমনিতে বাসেই যাই, কিন্তু খুব কষ্ট হয়। তাই এবার ট্রেনে যাচ্ছি।”
ওই ট্রেনের আরেক যাত্রী আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জারিন তাসরিন রাত্রী বললেন, এবারই তিনি প্রথম ট্রেনে যাচ্ছেন।
“বাসের টিকেট পাইনি। মামা অনলাইন থেকে ট্রেনের টিকেট কেটে দিয়েছে। বাড়ি যাওয়ার আনন্দ তো আছেই, সঙ্গে আরও দুই বান্ধবী থাকায় খুবই মজা হবে।”
দুপুরের পর কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে ভিড় আরও বেড়ে যায়। এ সময় দাঁড়িয়ে যাওয়ার জন্যও ট্রেনের টিকেট কেনেন অনেকে।
বেলা ৩টায় রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে বাড়ির পথে রওনা হন মুজিবুর রহমান নামে বেসরকারি সংস্থার এক চাকুরে। ঝক্কি এড়াতে দুই দিনের ছুটি নিয়ে আগেই বাড়ি যাচ্ছেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কোরবানির গরু কেনা বাকি আছে। তাছাড়া কাল থেকে ভিড় আরও বেড়ে যাবে। এজন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আজ চলে যাচ্ছি।"
বেলা পৌনে ৩টায় স্টেশনে আসেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। স্টেশন ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পরে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ঈদযাত্রার প্রথম দিন যাত্রীরা মোটামুটি ‘নির্বিঘ্নেই’ বাড়ি যাচ্ছেন।
“যাত্রীদের সেবা দিতে আমরা সব প্রস্তুতি নিয়েছি। কালোবাজারী রোধে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। যাত্রাপথে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন স্টেশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে।”
কমলাপুরের স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, শুক্রবার সারা দিনে ৫৯টি ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে; এর মধ্যে ৩১টি হল আন্তঃনগর ট্রেন।
“আজ থেকেই ট্রেনের ভিড় মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে। সকালে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে ভিড় ছিল। সারাদিনই এমন হবে। বড় কোনো ঝামেলা ছাড়াই সবগুলো ট্রেন ছেড়ে গেছে।”
সুন্দরবন, তিস্তা আর নীলসাগর এক্সপ্রেস প্ল্যাটফর্মে আসতে দেরি করায় ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানান স্টেশন ম্যানেজার।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ট্রেনের ছাদে, বাফারে না উঠতে যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
চাপ বাড়েনি সদরঘাটে
ঈদযাত্রার প্রথম দিন সকালে রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে ভিড় বাড়লেও ঢাকা সদরঘাটে যাত্রীর চাপ তেমন বাড়েনি।
বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) নিয়াজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য শুক্রবারে যে রকম যাত্রী যায়, আজ সে রকমই আছে।”
সকালে চাঁদপুরের যাত্রী বেশি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বরিশালের উদ্দেশ্যে সকাল ৮টা ও সাড়ে ৮টায় গ্রিন লাইনের দুটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে, সেখানেও যাত্রী ছিল ‘স্বাভাবিক’।
মিতালী লঞ্চে সন্তানকে নিয়ে চাঁদপুর যাচ্ছেন শাহনাজ পারভীন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, তার স্বামী সোমবার অফিস ছুটি শেষে যাবেন।
“ঈদের আগে আগে ভিড় বেশি থাকে, তখন বাচ্চ নিয়ে যাওয়া অনেক কষ্ট। তাই একটু আগেই রওয়ানা দিলাম।”
কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মওদুদ হাওলাদার বলেন, ঈদের যাত্রীদের নিরাপত্তায় সদরঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় তিনশ সদস্য পালা করে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিআইডব্লিউটিএর একজন পরিবহন পরিদর্শক বলেন, সদরঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ছয় লাখ দেশের দিক্ষণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন।
বাংলাদেশের মানুষ আগামী ২২ অগাস্ট কোরবানি ঈদ উদযাপন করবেন। ঈদের ছুটি শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে। তার আগে সোমবার বিকালে ঢাকা থেকে রওনা হওয়া মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।