সেই বাড়িতে গুপ্তধন মেলেনি; উঠে গেল পুলিশ পাহারা

গুপ্তধন আছে বলে দাবি ওঠার পর ঢাকার মিরপুরে যে বাড়িতে পাহারা বসানো হয়েছিল; অনুসন্ধান চালিয়ে ওই দাবির সত্যতা না পাওয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2018, 07:03 PM
Updated : 16 August 2018, 07:08 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসন গুপ্তধন নেই ঘোষণা দেওয়ার পর মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে পৌনে দুই কাঠা জমির উপর নির্মিত ওই বাড়ি থেকে পুলিশ প্রহরা উঠে যায়।

ঢাকা জেলার নির্বাহী হাকিম তাজোয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভুতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের দল বাড়িটিতে বেলা ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত টানা অনুসন্ধান চালায়। দুটি স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এখানে কোনো গুপ্তধন নেই।

তিনি বলেন, “যে দুটি স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে সেই স্ক্যানার ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীরে কোনো বস্তুর অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে। সেখানে এমন কোনো বস্তুর অস্তিত্ব থাকলে তা মনিটরে ধরা পড়ত। মনিটরে সে রকম কোনো বস্তু ধরা পড়েনি।”

মিরপুর থানায় করা এক সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে আধাপাকা ওই বাড়িতে গুপ্তধন থাকার সন্দেহে গত ২১ জুলাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে খোঁড়াখুড়ি শুরু হয়েছিল। ছয় ফুট খোঁড়ার পর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

তাজোয়ার বলেন, কোনো কিছুর অস্তিত্ব না পাওয়ায় ‘সব ধরনের কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করে’ বাড়ির মালিককে তার বাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছু না পাওয়ায় মালিককে বাড়ি বুঝিয়ে দেওযার পর পুলিশ প্রহরা প্রত্যাহার করা হয়েছে।”

বাড়ির মালিক মনিরুল আলম কিছু দিনের মধ্যে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করবেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

গুপ্তধন আছে বলে জিডি হওয়ায় পুলিশ পাহারা বসেছিল বাড়িটিতে

ব্যবসায়ী মনিরুল আট বছর আগে ওই টিনশেড বাড়ি কিনে সাতটি ঘর ভাড়া দিয়ে আসছিলেন। বাড়ির দেখাশোনা আর ভাড়া তোলার কাজটি করতেন একজন ‘কেয়ারটেকার’।

ওই জমিতে নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্য সম্প্রতি ভাড়াটিয়াদের বিদায় করে দেন মনিরুল। তারপর থেকে বাড়িটি ফাঁকাই পড়ে ছিল।

গত ১৪ জুলাই মনিরুল মিরপুর থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে তিনি বলেন, তার বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে গুঞ্জন থাকায় লোকজন ভিড় করছে এবং নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার ওই জমিতে খনন চালালে তার আপত্তি নেই। 

মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ জুলাই রাতে আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তিসহ দুজন বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করলে কেয়ারটেকার তাদের বাধা দেন। তখন তারা তাকে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে বলে, ‘ওখানে গুপ্তধন আছে’।

মনিরুল জিডি করার আগেই কক্সবাজারের টেকনাফের যুবলীগ নেতা তৈয়ব থানায় আরেকটি জিডি করেন।

তৈয়বের জিডিতে বলা হয়, এক সময় ওই বাড়ির মালিক ছিলেন তার বন্ধু সৈয়দ আলমের আত্মীয় দিলশাদ খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় দিলশাদরা বাড়ি বিক্রি করে চলে যান। যাওয়ার সময় দুই মণ সোনা মাটির নিচে পুঁতে রেখে গিয়েছিলেন।

মাটি খুঁড়ছিল শ্রমিকরা

সাংবাদিকদের তৈয়ব বলেন, সম্প্রতি তিনি এবং আলম ওই সম্পদের খোঁজে ঢাকায় আসেন। কিন্তু আলম তাকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির ‘বর্তমান মালিকের সঙ্গে আঁতাত করে সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করায়’ তিনি জিডি করার সিদ্ধান্ত নেন।   

ওই এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার জহিরুল ইসলাম মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। এরশাদ সরকারের আমলে জমিটি কেনার সুযোগ দেওয়া হলে স্থানীয় একজন কিনে নেন। পরে কয়েক দফা হাতবদল হয়ে বাড়িটি বর্তমান মালিক মনিরুলের কাছে আসে।

দুই পক্ষের জিডি পেয়ে প্রশাসন ওই বাড়িতে খননের সিদ্ধান্ত নেয়।