প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার ওই সড়কের ২৩টি সেতু উদ্বোধনের পর সেগুলো যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা-কোনাবাড়ি হয়ে চন্দ্রা সড়কে এখনও যানজট আছে। আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া হয়ে বাইপাইল পর্যন্ত সড়কেও যানবাহনের চাপ বেশি।
তাই গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে উত্তরাঞ্চল এবং ময়মনসিংহের বিভিন্ন রুটের যানবাহন ঈদের আগে যানজটে পড়তে পারে। তবে তা গত ঈদের তুলনায় কম হবে বলে মনে করছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশের অতিরিক্ত জনবল রাস্তায় নামবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার ঢাকার মহাখালী থেকে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের অবস্থা রোজার ঈদের চেয়ে ভালো।
বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্টের কাজ চলছে। এ কারণে আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে থেমে থেমে যানজট। বোর্ড বাজার থেকে মালেকের বাড়ি হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে।
সড়কের এ অংশে গর্ত রয়েছে। এছাড়া সড়কের একপাশে তিন লেইনের একটি ব্যবহার করা যায় না। যানবাহন চলে ধীরে। এ কারণে সড়কের এই অংশে যানজট তৈরি হয়।
বুধবার বেলা দেড়টার দিকে খোকন গাজীপুর চৌরাস্তার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে রওনা হয়েছিলেন তিনি।
“রাস্তার দুই পাশে কাজ করতেছে। আর বাইপাস সড়কে তো অনেক ট্রাক চলে। হেইগুলারে সাইড দেওয়ার জন্য এই রোডের গাড়ি আটকায় দেয়। চৌরাস্তা পার হইতে আরো ধরেন চল্লিশ মিনিট লাগব।"
গাজীপুরের কোনাবাড়ি অংশে যানজটের শঙ্কা থাকে সব সময়। তবে বুধবার কোনাবাড়ি এলাকায় যানজট দেখা যায়নি। এখানে ফ্লাইওভারের কাজ শেষের দিকে। ফ্লাইওভারের নিচের অংশের খুঁটি এবং অন্যান্য জিনিস সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে সড়ক প্রশস্ত হয়েছে। সড়কে গর্তও নেই তেমন।
এ কারণে এবার যানজট রোজার ঈদের চেয়ে কিছুটা কম হবে বলে দাবি করেন সেখানে দায়িত্বে থাকা এএসআই জাহিদ হাসান। এখান পর্যন্ত এখানে যানজট তেমন হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
“রাস্তার গর্তগুলো ভরাট করে দিয়েছে। এজন্য এবার এখানে জ্যাম তেমন একটা নাই। ঈদের সময়ও খুব জ্যাম হবে বলে মনে হচ্ছে না।”
কোনাবাড়িতে যানজটে আটকে থাকা গরুবোঝাই একটি ট্রাকের চালক শাহ আলম জানান, রংপুর থেকে সকাল ৬টায় রওনা হয়েছেন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে চান্দরা চৌরাস্তায় এসে যানজটে পড়েছেন।
ঈদের আগে অনেকেই বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন। এমন যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে চন্দ্রা চৌরাস্তায়। তবে যানজট দেখা যায়নি।
চন্দ্রা চৌরাস্তায় কথা হয় ঢাকা-রংপুর রুটের আগমন পরিবহনের চালক আজিজুর রহমানের সঙ্গে। তার আশা এবার ঈদে সড়কে যানজট থাকবে না।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গাবতলী থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত আসতে যানজটে পড়েননি তিনি।
“রাস্তা এক্কেবারে কিলিয়ার (ক্লিয়ার)। এইদিকে গাবতলী আর ওইদিকে এলেঙ্গা পর্যন্ত কোনো যানজট নাই। বিরিজগুলান (ব্রিজগুলো) চালু হওয়ায় আরও সুবিধা হইছে। আল্লাহর রহমতে এইবার ঈদের আগে যানজট হইব না।”
ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সড়ক এবার ‘ঠিকঠাক’ আছে বলে জানালেন নওগাঁ রুটের এসআর পরিবহনের চালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে সড়কে কিছুটা যানজট হতে পারে বলে শঙ্কা তার।
চন্দ্রার পরে কালিয়াকৈরের লতিফপুরে নতুন সেতু এখনও চালু হয়নি। এই অংশে দুই লেইনে যানবাহন চলাচল করে। লতিফপুর সেতু পার হয়েই যানজটে পড়তে হচ্ছে গাড়িগুলোকে। এখানে কালিয়কৈর বাইপাস সড়কে একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কারণে দুই লেনে ধীর গতিতে যানবাহন চলে। ফলে লতিফপুর সেতু থেকে বাইপাস পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে বুধবার।
মহাসড়কের বেশিরভাগ অংশেই চার লেইনের কাজ শেষ। তবে গোড়াই, দেওহাটা বাজার, পাকুটিয়া, টাঙ্গাইল বাইপাস এলাকায় সড়কের কিছু অংশ এখনও চার লেইন হয়নি। এসব এলাকায় যানবাহন ধীরে চলতে হয়। এলেঙ্গা বাজার এলাকায় যানবাহন কিছুটা ধীরে চললেও বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কে যানজট নেই।
এখন পর্যন্ত চার লেইন সড়কের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ায় এবার তেমন যানজট হবে না বলে জানান জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেইন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ইসহাক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৩টি সেতুর কাজ শেষ। আরও তিনটি বাকি আছে। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত অংশে পাঁচ কিলোমিটারের মতো সড়কের কাজ বাকি আছে। আর কোনাবাড়ি ওভারপাসের কাজও শেষের দিকে। তবে সেখানে নিচের সড়ক আগের চেয়ে প্রশস্ত হওয়ায় যানবাহন চলাচলে তেমন সমস্যা হচ্ছে না।”
সড়কে যে কিছু গর্ত আছে, সেগুলো মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ইসহাক।