রিমান্ড শেষে অসুস্থ নওশাবা, জামিন নাকচ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরতদের উপর হামলায় মৃত্যুর গুজব ফেইসবুকে ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার অভিনেত্রী-মডেল কাজী নওশাবা আহমেদ রিমান্ড শেষে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকআদালত প্রতিবেদক ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2018, 12:22 PM
Updated : 13 August 2018, 05:25 PM

এদিকে নওশাবার জন্য তার আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে গত ৪ অগাস্ট জিগাতলায় আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডির কার্যালয়ের কর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধার পর নওশাবা ফেইসবুকে লাইভে এসে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ‘গুজব’ ছড়িয়েছিলেন।

ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়। পরদিন ওই মামলায় তাকে এক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

চার দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর গত শুক্রবার তাকে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়। তা শেষ হওয়ার পর সোমবার তাকে আদালতে হাজির করার কথা ছিল।

আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুরের পর নওশাবাকে নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম।

কিন্তু আদালত প্রাঙ্গণেই নওশাবা অসুস্থ বোধ করার কথা জানালে তাকে এজলাসে না নিয়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল।

ঢাকা মেডিকেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাছের আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তখন বলেছিলেন, নওশাবা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নওশাবার অনুপস্থিতিতে বিকালে হাকিম আদালত তার জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী এ এইচ ইমরুল কাওসার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি জামিন চেয়েছিলাম; বলেছি, তিনি (নওশাবা) অসুস্থ। যদি পুলিশ হেফাজতে কোনো অঘটন ঘটে? তাকে জামিন দিন আমরা বাইরে তার চিকিৎসা করাব।”

কিন্তু শুনানি শেষে সেই আবেদন বিচারক আসাদুজ্জামান নূর নাকচ করেন বলে জানান এই আইনজীবী।

এদিকে রিমান্ড শেষে নওশাবাকে আদালতে উপস্থিত না করে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতকে না জানানোয় তদন্ত কর্মকর্তাকে বিচারক ভর্ৎসনা করেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত আইনজীবীরা।

নওশাবার আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আর হেফাজতের আবেদন করেননি।

এদিকে জামিনও নাকচ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী এই অভিনেত্রীর কারা হেফাজতে যাওয়ার কথা।

কিন্তু সন্ধ্যার পর জানতে চাইলে ঢাকার সিএমএম কোর্ট হাজতের ওসি মো. মোতালেব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কারাগারে পাঠানোর নিবন্ধন খাতায় তালিকায় নওশাবার নাম নেই।”

অর্থাৎ নওশাবা কারাগারে যাননি। সেক্ষেত্রে তার তদন্ত কর্মকর্তার হেফাজতে থাকার কথা।

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের মোবাইলে ফোনে রাতে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

নওশাবার আইনজীবী ইমরুল কাওসার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি অসুস্থ। তার কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। সম্ভবত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

এরপর খবর নিয়ে জানা যায়, নওশাবাকে বিকালে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। রাত ১০টার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া ) মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”

নওশাবা গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে বলেছিলেন, ফেইসবুক লাইভের সময় তিনি ঘটনাস্থলে নয়, উত্তরায় একটা শুটিং স্পটে ছিলেন; যদিও এই অভিনেত্রী ফেইসবুকে এমনভাবে লাইভ করছিলেন যেন তার সামনেই ঘটনা ঘটছে।

অন্য একজনের অনুরোধে নওশাবা একাজ করেছিলেন বলে তাকে উদ্ধৃত করে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছিলেন।