প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওয়ায়ে হাদিস (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আগে থেকেই হয়ে (কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে) আসছে, সেটাকে আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসা হচ্ছে।”
সারা দেশে এখন ছয়টি বোর্ড কওমি মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে জানিয়ে শফিউল বলেন, এদেরকে নিয়ে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হবে। এর নাম হবে ‘আলহাইয়্যাতুল উলিয়ালিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ’, আর কার্যালয় হবে ঢাকায়।
২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদসহ কয়েকশ আলেমের উপস্থিতিতে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে কওমির সনদকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণাকে হেফাজতে ইসলামের মত ইসলামী দলগুলোর কাছে ‘নতি স্বীকার’ হিসেবে দেখিয়ে বিভিন্ন বাম সংগঠন এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ সে সময় এর সমালোচনা করে। কওমির স্বীকৃতিতে বাংলাদেশে ‘জঙ্গিরা জেঁকে বসতে পারে’ বলেও হুঁশিয়ার করা হয়।
অন্যদিকে দেশের প্রায় ৭৫ হাজার কওমি মাদ্রাসা থেকে প্রতি বছর ১৪ লাখ শিক্ষার্থী বের হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সে সময় বলেন, “তাদের জীবনটা কি আমরা ভাসিয়ে দেব? তারা কি এদেশের নাগরিক না? তারা কি এদেশের মানুষ না? তাদের জীবনের কি কোনো মূল্য নাই? তাদের কি আমরা অন্ধকারে ঠেলে দেব? তাদের কি আমরা আলোর পথ দেখাব না?”
২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল গঠিত ওই কমিটিকে এখন এ আইনে আনা হচ্ছে জানিয়ে শফিউল বলেন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে, কমিটিতে নয় ধরনের ব্যক্তি থাকবেন।
বেফাকুল মাদ্রারিসিল আরাবিয়ার সভাপতি কমিটির চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিলের সিনিয়র সহ-সভাপতি, কো-চেয়ারম্যান এবং বেফাকুল মাদ্রারিসিল আবারিয়া বা এর মহাসচিব মনোনীত আরও পাঁচজন সদস্য থাকবেন কমিটিতে।
এছাড়া গওহরডাঙ্গার বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া, চট্টগ্রামের আন্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া, বগুড়ার আযাদদ্বীনি এদারায়ে তালিম, বগুড়ার তানজীমুল মাদারিসিল কওমিয়া এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দুইজন করে সদস্য কমিটিতে আসবেন।
চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলে যে কাউকে কমিটিতে যোগ করে নিতে পারবেন, তবে সব মিলিয়ে তা ১৫ জনের বেশি হবে না। কমিটি ‘দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে’ থাকবে।
২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সেটাকে এখন আইনের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শফিউল বলেন, ওই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে সনদকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত যত সনদ দেওয়া হয়েছে তা এ আইন অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।
তিনি বলেন, বোর্ড কমিটি সনদ নিয়ে যাবতীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। কমিটির নিবন্ধিত মাদ্রাসাগুলোর দাওয়ায়ে হাদিসের সনদ ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবির মাস্টার্স সনদের সমমান বিবেচিত হবে।
“এই কমিটির অধীনে ও তত্ত্বাবধানের দওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হবে। সিলেবাস প্রণয়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি, অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল ও সনদ তৈরিসহ অন্যান্য কাজে এক বা একাধিক কমিটি করা যাবে।”
আইনের উদ্দেশ্য পূরণে বিধি ও সংবিধি প্রণয়নের সুযোগ রাখা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, অন্যান্য আইনে যাই থাকুক না কেন এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাবে।
সরকারের প্রতিনিধি ছাড়া একটি বোর্ডের মাধ্যমে কীভাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হবে- সেই প্রশ্নে শফিউল বলেন, “কমিটি যেটা ছিল সেটাকে বোর্ড আকারে নিয়ে আসা হয়েছে, ছয়টি বোর্ডকে একীভূত করে এই বোর্ড করা হয়েছে।”
কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশন ছাড়া মাস্টার্স ডিগ্রি কীভাবে দেওয়া হবে- এ প্রশ্নে শফিউল বলেন, “এটা একটি ব্যতিক্রমী বিষয়। এটা হল মূলত কওমি মাদ্রাসায় প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে তাদেরকে মূল ধারায় নিয়ে আসা। সরকারের এই কাঠামোতে নিয়ে আসতে এটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”
এক প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ইসলামিক আরাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে নতুন এই আইনের খসড়ায় কিছু বলা নেই, ভবিষ্যতে হয়ত বিবেচনায় আসতে পারে।
কওমি শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের আগের অন্য ডিগ্রিগুলোর স্বীকৃতি না দিয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রির স্বীকৃতি কীভাবে হয়- “সেই জিজ্ঞাসায় শফিউল বলেন, এটা সরকারের পলিসি, আইনের বাইরে আমাদের ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই।”
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সংক্রান্ত খবর