রাখাইনে ‘ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছেন’ বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা

রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে ‘ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ধারার মধ্যে’ বিপুলসংখ্যক মানুষের ভোগান্তি দেখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে সফররত বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2018, 05:58 PM
Updated : 11 August 2018, 06:06 PM

গত বছর অগাস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ‘জাতিগত শুদ্ধি’ অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর প্রস্তুতি দেখতে সফরের অংশ হিসাবে শনিবার আদিবাসী রাখাইন এবং ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত কেইন গয়ি এলাকা ঘুরে দেখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়ার হয়, যেখানে শূন্য রেখায় কয়েক হাজার মিয়ানমার নাগরিক অবস্থান করছেন।

প্রত্যাগত শরণার্থীদের জন্য মিয়ানমারের প্রস্তুতি দেখতে তিনি দুটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র ও ৩০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার একটি ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

ভারত সরকারের সহায়তায় প্রত্যাগতদের জন্য শ জার গ্রামে প্রায় ১৪৮টি প্রি-ফেব্রিকেটেড ঘর নির্মাণের পরিস্থিতিও ঘুরে দেখেন তিনি।

১৫ হাজার মানুষ অধ্যুষিত গ্রাম পান ত পাইন গ্রামও ঘুরে দেখেন, যেখানকার বেশিরভাগ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়েছে।

বাকিদের মধ্যে কিছু মুসলিম ও বৌদ্ধ ও হিন্দু সেখানেই বসবাস করছে বলে মন্ত্রীকে জানানো হয়।

ওই গ্রামে মিয়ানমার সরকার স্থানীয়ভাবে স্থানান্তরিত মানুষের জন্য ২২টি ঘর এবং প্রত্যাগতদের জন্য আরও ৫০টি ঘর তৈরি করেছে।

শুক্রবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ের  সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন দিক ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর রাখাইনের রোহিঙ্গাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়টি ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

মিয়ানমারের পক্ষ থেকে শরণার্থীদের ফেরাতে তাদের সদিচ্ছার কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অংশগ্রহণের কথাও উল্লেখ করে দেশটি।

মিয়ানমার জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থানে ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এজন্য ৪২টি স্থান বাছাই করা হয়েছে। এসব স্থানে এ ধরনের আরও ঘর তৈরি করা হবে।

দুই মন্ত্রীর মধ্যে একটি হটলাইন তৈরির ব্যাপারেও একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার।

যেসব রোহিঙ্গা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডের (এনভিসি) নিতে আগ্রহী নয় তাদেরকে বিষয়টি বোঝানোর জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে  অনুরোধের জবাবে মিয়ানমার কক্সবাজার ক্যাম্পে প্রতিনিধি দল পাঠাতে সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মত হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকসহ অন্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার দেশে ফিরবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।