কমলাপুরে নারীদের কাউন্টারে ভোগান্তির অভিযোগ

ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রির তৃতীয় দিনে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নারীদের দুটি কাউন্টারের মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে লাইনে থাকা টিকেটপ্রত্যাশীদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2018, 11:41 AM
Updated : 10 August 2018, 11:41 AM

এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ এসেছে টিকেটপ্রত্যাশী কয়েকজন নারীর কাছ থেকে।

শুক্রবার ছুটির দিনে কমলাপুর স্টেশনের কাউন্টারগুলোর সামনে টিকেটপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল আগের দুই দিনের চেয়ে বেশি। আর কয়েক হাজার টিকেট প্রত্যাশীর মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশই ছিলেন নারী।

কমলাপুরো আগাম টিকেট বিক্রির ছাব্বিশটি কাউন্টারের মধ্যে নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র দুটি। তার মধ্যে একটি কাউন্টার বেশিরভাগ সময় বন্ধ করে রাখায় লাইনে থাকা নারীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়।

বেলা সাড়ে ১০টার দিকে নারী কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৭ এবং ১৮ নম্বর কাউন্টার থেকে নারীদের টিকেট দেওয়ার কথা থাকলেও ১৮ নম্বর কাউন্টারটি বন্ধ। আর ১৭ নম্বর কাউন্টার খোলা থাকলেও সেখানে ধীরগতিতে টিকেট বিক্রির অভিযোগ করেন কয়েকজন।

সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার পর সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই কাউন্টার থেকে ৭০ জনকে টিকেট দেওয়া হয়। ততক্ষণে অপেক্ষায় থাকা নারীদের লাইন আরও দীর্ঘ হয়েছে।

রাজধানীর একটি স্কুলের শিক্ষিকা মালেকা আকতার চৌধুরী বলেন, “এখানে অনেকে গত রাতে, কেউ ভোররাতে এসেছেন। সবাই ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত। আশপাশে কোনো ফ্রেশ রুমও নেই যেখানে নারীরা যেতে পারে। এর মধ্যে কাউন্টারে টিকেট দিচ্ছে খুব ধীরে। এভাবে আর পারছি না।”

মাহমুদা আক্তার কনক নামে আরেক টিকেটপ্রত্যাশী অভিযোগ করেন, একজন একাধিক ব্যক্তির জন্য টিকেট কেনায় সময় বেশি লাগছে।

“দেখা গেছে কেউ দুইটা টিকেট কিনবেন। কিন্তু পাশে থেকে আরেকজন তাকে বলছে তার জন্যও দুটি টিকেট কেটে দিতে। এটা করলে পেছনে যারা আছে তাদের টিকেট পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। এছাড়া সময়ও বেশি লাগছে।”

এই পরিস্থিতির মধ্যে স্টেশনে কতর্ব্যরত নারী পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তর্কে জড়াতে দেখা যায় অপেক্ষমান দুই টিকেট প্রত্যাশীকে। তারা অভিযোগ করেন, পুলিশ সদস্যদের সামনেই অনেকে ‘সিরিয়াল ভেঙে’ টিকেট নিয়ে যাচ্ছে।

ওই বাক বিতণ্ডার মধ্যে নারী পুলিশ সদস্যরা বাজে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আঞ্জুমান আরা।

তিনি বলেন, “আমরা এক জায়গায় দেড় ঘণ্টা একটানা দাঁড়িয়ে আছি। লাইন একটু সামনে যায়নি। কিন্তু সামনে যারা টিকেট কাটছে তারা অন্যদের টিকেটও কেটে দিচ্ছে। অভিযোগ জানাতে গেলে নারী পুলিশ সদস্যরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। আমাদের ধাক্কা দিয়েছে। তাদের রাখা হয়েছে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। কিন্তু তারাই বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।”

তার কথায় সায় দেন আরও কয়েকজন টিকেটপ্রত্যাশী নারী। তবে কর্তব্যরত দুজন নারী পুলিশ সদস্যের কাছে  এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেন।

পুলিশ সদস্যদের উল্টো দাবি, ওই দুই শিক্ষার্থীই লাইন ভেঙে আগে যেতে চাইছিল। তারা বাধা দেওয়ায় তর্কে জড়িয়েছেন।

সিরাজগঞ্জ যাওয়ার ট্রেনের টিকেটের জন্য রাত ৩টায় কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে জানালেন আরামবাগের বাসিন্দা নিগার সুলতানা।

তিনি বলেন, “পত্রিকায় দেখলাম নারীদের জন্য দুটো কাউন্টার। কিন্তু এখানে এসে দেখি একটা। ভাই যদি পারেন, রেলওয়ের কাউকে বলে দুই কাউন্টার থেকে টিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।”

নারীদের এ অভিযোগ জানালে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বেলা ১১টার দিকে ১৮ নম্বর কাউন্টারটি খুলে দেন। এরপর টিকেট বিক্রির গতি কিছুটা বাড়লেও বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত নারীদের কাউন্টারের সামনে ছিল ব্যাপক ভিড়।

নারীদের মত পুরুষরাও টিকেট কিনেতে এসে দুর্ভোগের কথা বলেছেন।

চিত্রা এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় কাউন্টারে এসেও বেলা ১০টা পর্যন্ত কাউন্টারে অপেক্ষা করে প্রত্যাশিত টিকেট পাননি যশোরের যাত্রী ফয়জুল ইসলাম।

হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, “এসি, ননএসি কোনো টিকেটই পাইলাম না। এখন দেখি অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। হয়ত কাল আসব নয়তো বাসে যাওয়া লাগবে।”

অন্য দিনের মত শুক্রবারও টিকেট বিক্রির শুরুতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকেট শেষ হয়ে গেছে বলে জানানো হয় কাউন্টার থেকে।

সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাব্বির আহমেদ। লাইনের প্রথম দিকে থেকেও এসি টিকেট না পাওয়ায় ক্ষোভ জানালেন তিনি।

“সুন্দরবনের একাধিক কোচ আছে এসি। চেয়ার সিট আছে একশোর বেশি। কিন্তু লাইনের তৃতীয় জন হয়েও আমি এসি টিকেট পেলাম না। আমরা সবসময় বলি এসব টিকেট যায় কোথায়। কিন্তু আজও জবাব পেলাম না।”

রাজশাহীর ধূমকেতু এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কাউন্টারে অপেক্ষা করার কথা বললেন সাখাওয়াত হোসেন নামে একজন।

তিনি বলেন, “আমার সিরিয়াল ছিল ৩০। আমাদের হিসেবে এসি টিকেট পাওয়ার কথা। কারণ সিল্কসিটি এবং ধূমকেতু ট্রেনে এসি কামরা অনেকগুলো। কিন্তু টিকেট পেলাম না। এখন বউবাচ্চা নিয়ে কীভাবে বাড়ি যাব বুঝতে পারছি না।”

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, শুক্রবার ৩৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের ২৬ হাজার ৮৯৫টি টিকেট ছাড়া হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

“নারীদের জন্য মোট ৩টা কাউন্টার। একটা চলতি কাউন্টার থেকেও নারীদের টিকেট দেওয়া হয়। এ কারণে অগ্রিম টিকেটের দুটো কাউন্টারের একটা বন্ধ রাখা হয়েছিল। চাহিদা বেশি থাকলে সেটা থেকেও টিকেট দেওয়া হয়।”