শহিদুলের মুক্তি দাবিতে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে এই দাবি করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর হামলার নিরপেক্ষ তদন্তও দাবি করেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে শহিদুলকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ; ডিবি হেফাজতে তার উপর নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে।
শহিদুলের মুক্তি দাবিতে ২০টি সংগঠনের সমন্বয়ে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) সংবাদ সম্মেলন করে, যাতে বক্তব্য রাখেন সুলতানা কামাল।
তিনি বলেন, “শহিদুল আলমের মতো একজন ব্যক্তি, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত, দেশেও তার যথেষ্ট সুনাম আছে, তাকে ধরে নিয়ে যদি আমরা পিটানি দিই, তাহলে আজকে এখানে যারা বসে আছেন, তারা কেউ আর কোনো কথা বলবে না।”
এই চিত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে মেলে না মন্তব্য করে সুলতানা কামাল বলেন, “স্বৈরাচারী রাষ্ট্র চেষ্টা করে একজন মানুষকে অত্যাচার করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে সবাইকে শিক্ষা দিতে, যাতে আর কেউ মুখ না খোলে।
“তাহলে আমরা প্রশ্ন রাখতে পারি যে, আজকে যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, তারা একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে চান? তারা মানুষকে ভয় দেখিয়ে যেতে চান? আমরা ন্যায়বিচার চাই, আমাদেরকে ভয়ের সংস্কৃতি থেকে মুক্তি দেন।”
শহিদুলের উপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সুলতানা বলেন, “পুলিশ বাহিনীকে যখন এই ধরনের আচরণ করার সুযোগ দেওয়া হয়... একই পুলিশ বাহিনী মোহাম্মদ নাসিমের (আওয়ামী লীগ নেতা) মাথা ফাটিয়েছিলেন, সাদেক হোসেন খোকার (বিএনপি নেতা) মাথাও ফাটিয়েছিলেন। মতিয়া চৌধুরীকে (আওয়ামী লীগ নেতা) মাটিয়ে ফেলে দিয়েছিল, আবার জয়নুল আবদিন ফারুককেও (বিএনপি নেতা) মেরেছিল।
“যখন বাহিনীকে দানব হিসেবে তৈরি করা হয়, তখন সেই দানবের কাছ থেকে কেউ ছাড় পায় না।”
সুলতানা কামাল বলেন, আওয়ামী লীগ ৪৭ থেকে প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেও তাদের সরকারের কাছ থেকে ‘কাম্য আচরণ’ পাওয়া যাচ্ছে না।
“আজকে আমরা যে আচরণ পাচ্ছি, এতে আমাদের দুঃখের সঙ্গে প্রশ্ন তুলতে হয়, তাদের আচরণের সঙ্গে স্বৈরশাসনের মধ্যে কোনো তফাৎ করতে পারি না কেন?”
সড়কের অব্যস্থাপনার কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন মানুষের মৃত্যুর একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে সুলতানা কামাল বলেন, “এই অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, দুর্নীতির ব্যাপারে যদি আমরা বলি, সেটার কারণে ধরে নিয়ে যদি মারধর করার মত ব্যাপার হয় তাহলে শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে।”
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী হেলমেট পরা যুবকদের কোনো রাজনৈতিক দল সমর্থন করে কি না, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
“আজ পর্যন্ত আমরা জানি না, এই দুর্বৃত্তপনা যারা করেছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে কি না বা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না। যদি না হয়ে থাকে তাহলে বলব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
গ্রেপ্তার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষমা না করার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনাও করেন সুলতানা কামাল।
তিনি বলেন, “আমি ভীষণভাবে বিচলিত বোধ করেছি যে নাহিদ ভাইয়ের মতো মানুষ, যার সাথে আমরা রাস্তায় হেঁটেছি, ঊনসত্তরে গণআন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তিনি বলছেন এই ছাত্রদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
“নাহিদ ভাইয়ের মুখে এ কথা মানায়? যদি নাহিদ ভাইয়েরা এ রকম কথা বলে, তাহলে আমরা কার কাছে যাব? এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে যে, আমাদের আর কারও কাছে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না।”
এইচআরএফবির সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত দাবির পাশাপাশি শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং আন্দোলনে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ও এইচআরএফবির আহ্বায়ক শীপা হাফিজার পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সেলিনা আহমেদ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান জাকির হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম, আর্টিক্যাল-১৯ এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক তাহমিনা রহমান।