দুই বছর কারাগারে থাকার পর বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ছাড়া পান নর্থ সাইথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক।
তার আগে বুধবার ঢাকার আদালত গুলশান হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পুলিশের সুপারিশে হাসনাত করিমকে অব্যাহতির আদেশ দেন।
গাজীপুরের কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত রাতে আদালতের কাগজপত্র কারা অফিসে পৌঁছেছিল। আজ কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে বিকাল সাড়ে ৪টায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।”
কারাগার থেকে বেরিয়ে একটি কালো জিপে করে স্বজনদের সঙ্গে ঢাকার পথে যাত্রা করেন হাসনাত করিম। উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলতে চাননি।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে যখন জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল, তখন স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সেখানে ছিলেন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হাসনাত করিম।
ঢাকার বনানীর ব্যবসায়ী প্রকৌশলী রেজাউল করিমের ছেলে হাসনাত করিম মেয়ের জন্মদিন উদযাপনের জন্য হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন বলে তখন তারা জানিয়েছিলেন।
ওই ক্যাফেতে জঙ্গিরা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল; এরপর কমান্ডো অভিযানে হাসনাত করিমের পরিবারসহ কয়েকজন জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান।
কিন্তু ওই ক্যাফেতে জিম্মি দশার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর হাসনাতকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। হামলার পরদিন ভোরে ধারণ করা ওই ভিডিওতে হাসনাত করিমকে জঙ্গিদের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা গিয়েছিল।
তবে হাসনাতের স্ত্রী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, জিম্মি অবস্থায় তাদের বিভিন্ন নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয়েছিল।
এরপর ওই বছরের ৪ অগাস্ট গ্রেপ্তার হন হাসনাত করিম। বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা ওই মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে পুলিশ।
হাসনাত করিম অনেকবার জামিনের আবেদন করলেও প্রতিবারই তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলে আসছিলেন, অভিযোগপত্রে হাসনাত করিমের নাম আসতে পারে।
কিন্তু দুই বছর পর তদন্ত শেষ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযোগপত্র দাখিলের পর জানায়, হামলায় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক এই শিক্ষকের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “এই ঘটনায় জীবিত উদ্ধারদের মধ্যে কেউই হাসনাত করিমের নাম বলেনি। তদন্তে হামলার কোনো পার্টেই হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।”
অভিযোগপত্র থেকে না বাদ যাওয়ার পর আদালতে বিচার শুরুর আগে মুক্তি পেলেন হাসনাত করিম।