ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কিনে নিচ্ছে সরকার

পুরান ঢাকার হৃষিকেশ রোডে যে ভবনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন কিনে নিচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2018, 11:29 AM
Updated : 8 August 2018, 11:29 AM

ব্যক্তি মালিকাধীন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষিত ওই বাড়ি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ দুই হাজার ৯০০ টাকা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদন পায়।

পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন’ অনুসারে সরকার ‘সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে’ বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে রোজ গার্ডেন কিনবে।

হৃষিকেশ দাস নামের এক ধনী ব্যবসায়ী ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর ওই বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। পশ্চিমমুখী ওই দোতলা বাড়ির চারপাশ তিনি সাজিয়ে তোলেন বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের বাগানে। সেই থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’৷

করিন্থীয়-গ্রীক শৈলী অনুসরণে তৈরি সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বড় একটি জলসা ঘর, যার মেঝে শ্বেত পাথরের আর সিলিংয়ে সবুজ কাচ দিয়ে তৈরি ফুলের নকশা।

হৃষিকেশ তার গোলাপ বাগান সাজিয়েছিলেন দেশ-বিদেশ থেকে আনা হরেক রকম পাথরের ভাস্কর্য আর সুদৃশ্য ফোয়ারা দিয়ে, সামনেই শান বাঁধানো পুকুর। ‘রোজ গার্ডেন’ সে সময় হয়ে উঠেছিল ঢাকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।  

কিন্তু রোজ গার্ডেন সেজে ওঠার পর কয়েক বছরের মধ্যেই দেউলিয়া হয়ে যান হৃষিকেশ দাস। ১৯৩৬ সালে ঢাকার বই ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি।

কাজী আবদুর রশীদ সেখানে প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণের সাক্ষী হয় রোজ গার্ডেন।

মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই রোজ গার্ডেনেই গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ দলের নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসে।

মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর। এ কারণে সে সময় ভবনটি ‘হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

স্বাধীনতার আগে আগে ১৯৭০ সালে বেঙ্গল স্টুডিও ও মোশন পিকচার্স লিমিটেড রোজ গার্ডেন প্যালেসের ইজারা নেয়। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে।

পরে ১৯৯৩ সালে রোজ গার্ডেনের অধিকার ফিরে পান কাজী আবদুর রশিদের মেজো ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী লায়লা রকীব ওই সম্পত্তির মালিক হন।