শহিদুলকে হাসপাতালে ভর্তির মত কিছু মেলেনি: বিএসএমএমইউ

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে রিমান্ডে থাকা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে হাই কোর্টের আদেশে হাসপাতালে নেওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে আবার গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2018, 08:53 AM
Updated : 8 August 2018, 09:49 AM

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ-আল-হারুন বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের মেডিকেল বোর্ড তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছে। তাকে ভর্তি করার মত অবস্থা দেখিনি।”

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বুধবার বেলা ২টার পর শহিদুল আলমকে আবার গোয়েন্দা পুলিশ নিয়ে গেছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, “উনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল আমরা আগামীকাল পাব।”

দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুলকে রোববার রাতে গ্রেপ্তার করার পর সোমবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

কিন্তু শহিদুলকে ডিবি হেফাজতে নির্যাতন করার অভিযোগ এনে রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মঙ্গলবার হাই কোর্টে রিট করেন তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ।

ওই আবেদন শুনে আদালত দ্রুত শহিদুলকে ডিবি হেফাজত থেকে হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শহিদুলের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

সে অনুযায়ী বুধবার সকাল ৯টার দিকে শহিদুল আলমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড কেবিন ব্লকের পাঁচ তলার একটি কক্ষে শহিদুল আলমকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে।

শহিদুলের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ ও কয়েকজন আইনজীবীকে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের নিচে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। তবে তারা শহিদুলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান দৃক গ্যালারির মহাব্যবস্থাপক এ এস এম রেজাউর রহমান।

বেলা সোয়া ২টার দিকে শহিদুল হাসপাতালের থেকে বেরিয়ে আসার সময় রেহনুমা এবং দৃকের কয়েকজন সহকর্মীকে তার পাশে দেখা যায়।

রেজাউর রহমান পরে বলেন, “উনি (শহিদুল) গাড়িতে ওঠার সময়ও বলেছেন, উনার হাতে পায়ে ব্যথা। উনার স্ত্রী আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।”

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইসবুক লাইভে আসেন অধিকারকর্মী আলোকচিত্রী শহিদুল। ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।

এরপর রোববার রাতে শহিদুলকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করে পুলিশ।

ওই মামলায় ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয় আলোকচিত্রী শহিদুলের বিরুদ্ধে।

সোমবার আদালতে তোলার আগে গাড়ি থেকে নামার সময় শহিদুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে আঘাত করা হয়েছে। আমার রক্ত মাখা পাঞ্জাবি ধুয়ে আবার পরানো হয়েছে।”

আর হাকিম আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শহিদুল বলেন, গ্রেপ্তারের সময় তার চোখ-মুখ বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয়েছিল।

“তারা আমাকে মোসাদ, আইএসআইর এজেন্ট বলে গালি দেয়, দেশদ্রোহীও বলে তারা। তারা আমাকে মারধরও করে।”

৬৩ বছর বয়সী শহিদুলকে হাসপাতালে পাঠানোর আবেদন জানিয়ে মঙ্গলবার হাই কোর্টে তার স্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমার করা আবেদনে বলা হয়, পুলিশ হেফাজতে শহিদুলকে ‘নির্যাতন’ এবং চিকিৎসা না দিয়ে তাকে রিমান্ডে পাঠানোর মাধ্যমে সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৩ এবং ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে।