বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কঠোর পুলিশ, সংঘাত

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নবম দিনে রাজধানীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2018, 02:18 PM
Updated : 8 August 2018, 05:55 PM

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় দুই দিন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এক দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

দিনভর সংঘর্ষের পর সোমবার সন্ধ্যায় আফতাবনগর এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার মাসফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গল ও বুধবার (৭ ও ৮ অগাস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

পাশাপাশি ৯ থেকে ১১ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামার সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাবে।

মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ফয়জুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দিনের ছুটি ঘোষণা করে সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের আসন্ন পরীক্ষায় বর্ধিত ছুটি হিসেবে এই ছুটি কার্যকর হবে।

আগামী বুধবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামার সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা জানিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্যই এ ছুটি দেওয়া হয়েছে।”

বসুন্ধরা এলাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর প্রক্টর নাজমুল আহসান খানও শিক্ষার্থীদের সামনে এসে ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “আজকে এখানে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, আমরা (শিক্ষকরা) অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি তোমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। আমাদের সাথে পুলিশের সমঝোতা হয়েছে, তারা তোমাদের নিরাপদে ছেড়ে দেবে।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কবে খোলা হবে তা ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট এবং তোমাদের মেইলে জানিয়ে দেওয়া হবে।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ রাত সাড়ে ৮টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের শান্ত করার জন্য প্রক্টর স্যার বন্ধের কথা বলেছিলেন। এখন পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত বা নোটিস দেওয়া হয়নি।”

এদিন রাজধানীতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে দেখা না গেলেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।  

সকাল থেকে সংঘর্ষের এসব ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সরকারসমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদেরও দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।

আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে বেলা পৌনে ১১টা থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে।

ইস্ট ওয়েস্টের পাশাপাশি বসুন্ধরার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (আইইউবি) ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষার্থী এবং শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীদের কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

আর তেজগাঁওয়ের আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের পর পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের একজন একজন করে বের হতে বললে অনেকে ভেতরে আটকা পড়েন, তৈরি হয় আতঙ্ক।  

 এসব ঘটনায় সংবাদকর্মী, পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিকালে সংঘর্ষ থামার পরও প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে বলে আমাদের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন। 

আফতাবনগর

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে মেরুল বাড্ডার দিক থেকে একদল যুবক লাঠি নিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়।

লাঠি হাতে যুববকদের মধ্যে বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদেরও দেখা যায় বলে স্থানীয় একজন বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

এক পর্যায়ে ওই যুবকরা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং সাধারণ পথচারীদের ওপর চড়াও হয়। স্কুলের পোশাক পরিহিত দুজনকে এ সময় পেটাতে দেখেন আমাদের একজন প্রতিবেদক।

পরে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরাও সেখানে অবস্থান নেন। তারা শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বললে তারা না গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে দেয়।

পুলিশ তখন টিয়ার শেল ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ভেতরে চলে যায়। লাঠি হাতে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া যুবকরা তখনও ইউনিভার্সিটির দিকে ঢিল ছুড়ছিল।

এ সময় সেখানে দায়িত্বরত প্রথম আলোর প্রতিবেদক নাসরিন আক্তার সুমির ওপর চড়াও হয় একদল যুবক। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা।

পরে তাকে বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে ফোনের সব তথ্য পুলিশ মুছে ফেলে বলে অভিযোগ করেন সুমি।

বেলা ২টার দিকে ক্যাম্পাসের বাইরে একটি প্রাইভেট কার ভাংচুর করা হয়। পৌনে ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের মঙ্গে পুলিশের আবারও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

এ দিকে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ চলায় বহু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আটকা পড়েন। উৎকণ্ঠিত অনেক অভিভাবককে রামপুরা ও বাড্ডায় এসে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

বেলা সোয়া ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক দিয়ে একযোগে বেরিয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় একজন শিক্ষার্থী বলেন, তারা সকালে ক্যাম্পাসে এসে সংঘর্ষের কারণে এক প্রকার বন্দি হয়ে ছিলেন। তাদের বেশ কয়েকজন ছাত্র মারামারির মধ্যে আহত হয়েছেন।

আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, “আজ বিনা উসকানিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। পুরো ক্যাম্পাসে তারা তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের সাথে কিছু যুবক ছিল, তারা কারা এটা সবাই জানে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, “বহিরাগতরা এসে হামলা চালিয়েছে। আমাদের ছেলেরা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত। পুলিশ নিরাপত্তা দিয়েছে। এখন যে যার মত বেরিয়ে যাচ্ছে।”

কারা হামলা করেছিল- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলছে জামায়াত শিবির ছিল। এটা হতে পারে, তবে আমাদের ছেলেরা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের এডিসি আহমেদ হুমায়ূন বলেন, সকাল থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। এখন নিরাপদে সবাই যেন ঘরে ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার রামপুরা ও আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের সঙ্গে সোমবার পুলিশ ও বহিরাগতদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।

শাহবাগ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘হামলার’ প্রতিবাদে মিছিলে বাধা পেয়ে রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

সোমবার বেলা ৩টার পর প্রায় ২০ মিনিট ধরে এই সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য। পুলিশের এক সদস্যকেও ইটের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে যেতে দেখা গেছে।

বাসচাপায় দুই ছাত্র-ছাত্রী নিহতের প্রতিবাদে রাজধানী অচল করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার ঢাকার জিগাতলায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। হেলমেট পড়ে ধারালো অস্ত্র হাতে একদল যুবককে সে সময় হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়।  

এর প্রতিবাদে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর বিক্ষোভ মিছিল করে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী। বেলা ১২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদশ থেকে মিছিল শুরুর পর মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন, কার্জন হল, বুয়েট ঘুরে টিএসসি হয়ে বিকাল ৩টার দিকে তারা শাহবাগের দিকে অগ্রসর হন।

কিন্তু সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের আটকে দিলে বাকবিতণ্ডা এবং পরে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়৷

পুলিশ তখন টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা ঢিল ছুড়তে শুরু করে। ইটের আঘাতে এক পুলিশ আহত হলে পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছোড়া শুরু করে। এরপর শুরু হয় পুলিশের লাঠিপেটা।

প্রায় ২০ মিনিটের এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দুই আন্দোলনকারীকে আটক করে নিয়ে যেতে দেখা যায় পুলিশকে। এরপর পুলিশ চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নিলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে টিএসসিতে চলে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু রায়হান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা পুলিশকে বলেছিলাম, মিছিল নিয়ে শাহবাগ ঘুরে চলে আসব। কিন্তু তারা আমাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে তারা টিয়ার গ্যাস মারা শুরু করে।।"

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক যুবক শাহবাগ মোড়ে এসে রাস্তা বন্ধ চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইট ছোড়ে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়।”

বিক্ষোভকারীদের ইটের আঘাতে ইমানুল নাম নামে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান মারুফ।

দুই শিক্ষার্থীকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যাচাই বাছাই করে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হব।”

শিক্ষার্থীদের জড়ো হওয়া ঠেকাতে সন্ধ্যা ৭টার দিকেও পুলিশকে শাহবাগ মোড়ে প্রস্তুত হয়ে থাকতে দেখা যায়।

বসুন্ধরা

রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (আইইউবি) এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ করতে সড়কে নেমে পুলিশের বাধা পেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিলে পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করে।

শিক্ষার্থীরা তখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশের ধাওয়ায় তারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন। সংঘর্ষের কারণে ওই এলাকার সব দোকান পাট বন্ধ করে দেওয়া হয়; যানচলাচলও সীমিত করে দেয় পুলিশ।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র দাবি করেন, শতাধিক শিক্ষার্থী এই সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে অ্যাপোলো হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলেও নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “সকালে পুলিশ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশ তখন বলে, দুইজনের বেশি শিক্ষার্থী থাকলেই তাদের অ্যারেস্ট করা হবে। পরে শিক্ষার্থীরা বের হতে চাইলে সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে।”

ছররা গুলি ছোড়ার কথা অস্বীকার করলেও টিয়ারশেল ছোড়ার কথা স্বীকার করেছেন ভাটারা থানার ওসি কামরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “বসুন্ধরা এলাকায় কিছু শিক্ষার্থী নেমেছিল। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল মারে। এরপর পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।”

সংঘর্ষের কারণে দুপুরের পর অনেকেই  ওই এলাকায় আটকা পড়েন। অফিস ছুটি শেষে সন্ধ্যায় লোকজনকে দলবেঁধে ওই এলাকা ত্যাগ করতে দেখা যায়। 

বিকালে যমুনা ফিউচার পার্কের পাশে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রবেশের রাস্তায় এবং ভেতরে প্রায় তিন শতাধিক পুলিশ সদস্যকে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশের ৭ থেকে ৮টি ভ্যান ও গাড়ি রয়েছে সেখানে ; পুরো এলাকায় থম থম অবস্থা বিরাজ করছে ।

তেজগাঁও

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে পুলিশের সঙ্গে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আটকা পড়লে আতঙ্ক তৈরি হয়।

একজন শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসের বাইরে মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

“ধাওয়ার মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আটকা পড়ে। অন্যরা যে যার মতো চলে যায়।”

আহসাউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস ফ্যাকাল্টির শিক্ষক কাজী আহমেদ ফারহান বলেন, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে দিকে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমাদের বলছে, পুলিশের পিটুনিতে কয়েকজন আহত রয়েছে। পুলিশ তাদের কয়েকজনকে তুলেও নিয়ে গেছে।”

তিনি জানান, সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের বের হওয়ার সময় পুলিশ কিছু শর্ত দেয়। শিক্ষার্থীরদের পরিচয় পত্রের  ফটোকপি পুলিশের কাছে জমা দিয়ে তারপর তাদের বের হতে বলা হয়।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা (শিক্ষার্থীরা) মিছিল করার নামে গাড়ি ভাংচুর করে এবং রাস্তায় চলাচলে বাধা দেয়। এতে পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরে তদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।”

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে যারা আছে তাদের বের হওয়ার সুযোগ দিলে হাঙ্গামা করবে। জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তাদের একসাথে বের হতে দেওয়া হবে না। তারা এক এক করে বের হবে এবং সংশ্লিষ্ট অভিভাবক দায়িত্ব নেবে।”

পরে পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী আটকা পড়া শিক্ষার্থীরা জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সহায়তায় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিয়ে বিকালে একে একে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে বলে মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সাদমান হাসান লাবির জানান।

মহাখালী

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের মধ্যে মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকেও শিক্ষার্থীদের বের হওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ কড়াকড়ি আরোপ করে বলে আন্দোলনকারীরা জানান।  

চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা এসে তাদের হুমকি দেয়। পরে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়।

বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের সামনে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তখন ছাত্রদেরকে একবারে তিন-চারজন করে ভাগ হয়ে বাসায় চলে যেতে বলা হয়।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে সংঘর্ষের খবর জানার পর ব্র্যাকের ছাত্রদের একটি অংশ বেরিয়ে গিয়ে হাতিরঝিলে জড়ো হয়। সেখান থেকে আফতাবনগর গেইটে গিয়ে তারা সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে বিকালে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।