সড়কে প্রাণহানি: হত্যা প্রমাণ হলে তবেই মৃত্যুদণ্ড

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে প্রাণহানিতে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হলেও হত্যা প্রমাণিত হলে ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী দায়ীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2018, 12:30 PM
Updated : 6 August 2018, 12:30 PM

তবে এক্ষেত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে হবে হত্যার উদ্দেশেই চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন।

ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় সাজার তিন রকমের বিধান আছে। এগুলো হল- হত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড, ‘খুন’ না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪(খ) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড।

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে সচরাচর ৩০৪(খ) ধারায় মামলা হয়। এই ধারায় মাত্র তিন বছর সাজার বিধানের কারণে চালকদের বেপরোয়া মনোভাব এবং সড়কে মৃত্যু ক্রমাগত বাড়ছে বলে মনে করে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো।

সোমবার মন্ত্রিসভায় সড়ক নিরাপত্তা আইনের চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, দণ্ডবিধির ৩০৪(খ) ধারায় সাজা আগে বছর সাজার কথা থাকলেও ১৯৮৫ সালে তা কমিয়ে তিন বছর করা হয়।

এখন সড়ক পরিবহন আইন পাস হলে দুর্ঘটনার জন্য নতুন আইনের আওতায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সাজা দেওয়া যাবে জানিয়ে আনিসুল বলেন, “যদি তদন্তে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় তবে দণ্ডবিধির ৩০২ এবং ক্ষেত্রমতে ৩০৪ ধারা এই আইনেও প্রযোজ্য হবে।

“কোনো একটা সড়ক দুর্ঘটনা শুধু সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। চালকের যদি হত্যা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকত তবে সড়ক পরিবহন আইনে সেই বিচার হবে না, তখন তার বিচার ৩০৪ ধারা অনুযায়ী হবে।”

আইনমন্ত্রী বলেন, “যদি দেখা যায় চালক হত্যাই করেছে তবে ৩০২ ধারা অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে তদন্ত সাপেক্ষে যখন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু হলেই ৩০২ এ যাবে তা নয়। তদন্ত এবং তথ্যের উপর নির্ভর করে এটা কোন খাতে যাবে সেটা তদন্ত যারা করবেন তারাই ঠিক করবেন।

“যদি তদন্তে দেখা যায় এটা স্বাভাবিক সড়ক দুর্ঘটনা নয়, এখানে ড্রাইভার যাকে মেরেছে সেটা সড়ক দুর্ঘটনার থেকেও…তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরে যদি দেখা যায় সেটা হত্যা হয়েছে তাহলে (দণ্ডবিধির) ৩০২ ধারা এবং হত্যাটা স্বেচ্ছায় না করে থাকলে ৩০৪ ধারায় বিচার করা হবে।”

৩০২ ধারা অনুযায়ী হত্যা প্রমাণ করতে হলে তদন্ত কর্মকর্তাকে ‘ইনটেনশনটাও’ প্রমাণ করতে হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনায় কেউ যদি গুরুতর আহত হন বা মৃত্যুরবণ করেন তাহলে শাস্তি হচ্ছে পাঁচ বছর।

গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, রমিজ উদ্দিনের (শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ)  দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তদন্ত শেষ হলে তা দ্রুত বিচার আইনের অধীনে বিচার করা হবে।

সংসদে পাসের আগে নতুন সড়ক পরিবহন আইন অধ্যাদেশ আকারে কার্যকরের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, আইনটি পাসের জন্য কবে সংসদে কবে যাবে তা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।

“মন্ত্রিসভায় আলাপ-আলোচনা হয়েছে এটা অর্ডিনেন্স (অধ্যাদেশ) করা হবে না, এটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাস হবে।”

সংসদের মাধ্যমে পাস করা হলে এই আইন নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ পাওয়া যাবে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

সড়ক পরিবহন আইনে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর রাখায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “তাদের দাবি নিশ্চয়ই পূরণ হয়েছে।

“কারণ এই যে ভ্রান্ত একটা ধারণা ছিল এখানে হত্যা প্রমাণিত হলেও দণ্ডবিধির ৩০২ বা ৩০৪ ধারা প্রযোজ্য হবে না, সেই জিনিসটা আজকে দূর হল। আমার মনে হয়, (নতুন আইনে) যে অপরাধকে আমরা পাঁচ বছরের আওতায় এনেছি তা যথেষ্ট।”