সোশাল মিডিয়ায় অপপ্রচার ঠেকাতে ‘কন্টেন্ট ফিল্টারিং’ এর একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
Published : 06 Aug 2018, 02:47 PM
তিনি বলেছেন, কোনো পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় বা জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে ইন্টারনেট বন্ধের মত পদেক্ষেপও সরকার নিতে পারে।
“আমাকে বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতম সেক্রিফাইস করতেই হবে।এটি খুব সংগত কারণেই করতে হবে। রাষ্ট্র বাঁচাব না ফেইসবুক বাঁচাব? আমাকে অবশ্যই রাষ্ট্র বাঁচাতে হবে।”
সোমবার ঢাকার র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ‘আইটিইউ বিটিআরসি এশিয়া-প্যাসিফিক রেগুলেটরস রাউন্ডটেবিল-২০১৮’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মৃত্যুর গুজব ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “ফেইসবুকে আমাদের ফিল্টারিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফেইসবুক তার নিজের আমেরিকান আইন অনুযায়ী কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে।”
কোনো কন্টেন্ট বাদ দেওয়া বা অন্য বিষয়ে ফেইসবুককে শুধু অনুরোধ করা যায় জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আমরা কেবল ফেইসবুককে অনুরোধ করতে পারি। ফেইসবুক তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নিজেদের কাজগুলো করে থাকে। এখন ফেইসবুকের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। ফেইসবুক আমাদের সব কথা শোনে না, কিন্তু কিছু কথা শোনে।”
এ কারণে টেলিকম বিভাগের মাধ্যমে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রকল্পটি ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ক। আমরা প্রত্যাশা করি এ প্রকল্প যদি শেষ করতে পারি তখন সম্পূর্ণভাবে আমরা আমাদের কন্টেন্ট ফিল্টারিং অথবা যে ধরনের বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা দরকার সেগুলো করতে সক্ষম হব।”
কবে নাগাদ এ প্রকল্প বাস্তবায়তি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এটি টেবিলে ছিল, এই প্রকল্পে অনেকে যুক্ত আছে সবাইকে মিলিয়ে এটি করতে হবে।”
ফেইসবুকে গুজব ছড়ানোর পর ঢাকার ধানমণ্ডিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হলে শনিবার সন্ধ্যার পর ২৪ ঘণ্টার জন্য মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর জি ও থ্রি-জি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আগামী নির্বাচনের সময় বা কোনো ঘটনা ঘটলে আবারও ইন্টারনেট বন্ধ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলে মন্ত্রী বলেন, “সবার আগে রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা এবং অন্য বিষয়গুলো অস্বীকার করার উপায় নেই। আবার যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যে পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে কিংবা জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে- তখন প্রযুক্তির দিকে তাকিয়ে থাকা- এটা কোনো অবস্থাতেই নয়। আমাকে বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর সেক্রিফাইস করতেই হবে।”
মোবাইল অপরেটরদের নিরীক্ষার বিষয়ে কোনো উদ্যেগ নেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের ছাড় কোথাও দেওয়া হবে না, রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের টেলিকম সংস্থা (এপিটি)-এর উদ্যোগে এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির যৌথ আয়োজনে টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আয়োজিত এ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার এবং বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বক্তব্য দেন।
এছাড়া আইটিইউর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক আইওয়ান করোইভুকি এবং এপিটির মহাসচিব মিস আরিওয়ান হাওরাংসি বক্তব্য রাখেন।
দুই দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্ম অধিবেশনে ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন: ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য ইকো-সিস্টেম, ডিজিটাল কানেক্টিভিটি উন্নয়নের বাধাসমূহ এবং এর প্রতিকার, নব নব প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ এবং এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহের করণীয়, সবার জন্য ব্রডব্যান্ড সেবা, গ্রাহকের ডাটার নিরাপত্তায় লিগ্যাল এবং রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হবে।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান, অপারেটর ও টেলিকম প্রতিনিধি এবং আইসিটি বিশেষজ্ঞ মিলিয়ে প্রায় ১৩০ জন প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।