রোববার দুপুরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, ধানমণ্ডি ১ নম্বর ও ২ নম্বর সড়কে বেশ কয়েকজন আলোকচিত্র সাংবাদিক আহত হন।
চাপাতি, রড, লাঠি হাতে এই যুবকদের তৎপরতার সময় পুলিশ সামনে থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি; তবে ওই সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দিকে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ছিল পুলিশ।
এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শনিবার জিগাতলায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
এরপর রোববার সকালে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় শান্ত থাকলেও মোটর সাইকেল নিয়ে একদল যুবকের মহড়া দেখা যাচ্ছিল।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে নাশকতার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ তুলে এদিনে সকালে মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছিল।
দুপুরে শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী অবস্থান নেয়। সাড়ে ১২টার পর তারা মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে রওনা হয় ধানমণ্ডির দিকে। ধানমণ্ডি দুই নম্বর সড়কে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
শিক্ষার্থী ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলার মধ্যে দেড়টার দিকে সেখানে হেলমেট পরা যুবকদের তৎপরতা দেখা যায়। কারও হাতে কিরিচ, কারও হাতে রড, কারও হাতে লাঠি।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে এক তরুণ রাস্তায় বিক্ষোভের ছবি তুলছিলেন। নিচে থাকা যুবকরা ওই তরুণের দিকে ইট ছোড়া শুরু করে।
ইটের মুখে ওই তরুণ নিচে নেমে এলে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় তাকে, ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার ক্যামেরা।
এরপর সাংবাদিক বিশেষ করে আলোকচিত্রীদের উপর চড়াও হয় এই যুবকরা, যা ঘটে পুলিশের সামনেই। যারাই ক্যামেরা বা মোবাইলে ছবি তুলতে যাচ্ছিল, তাদের উপরই হামলা চালায় তারা।
ধানমণ্ডি ১ নম্বর সড়কে এপি’র ফটো সাংবাদিক এ এম আহাদকে ধরে ফেলে তারা; কয়েকজন মিলে রড দিয়ে বেধড়ক পেটায় তারা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হেলমেটধারীদের ধাওয়ায় সাংবাদিকরা দুইভাগ ভাগ হয়ে যায়। একটি অংশ ধানমন্ডি দুই নাম্বার সড়কে স্টার রেস্তোরাঁর দিকে চলে যায় এবং অন্য অংশটি ল্যাব এইডের দিকে ডা.রেফাত উল্লাহ হ্যাপি অর্কিড প্লাজার সামনের মোড়ে অবস্থান নেয়।
দুই দিকেই সাংবাদিক ধাওয়া করে ইট ছুড়ছিল এই যুবকের দল। এসময় এক নারী সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোকচিত্রী মাহমুদুজ্জামান অভি, প্রথম আলোর আহমেদ দীপ্ত, চ্যানেল আইয়ের সামিয়া রহমান, বণিক বার্তার পলাশ সিকদার, বিডি মর্নিং’র আবু সুফিয়ান, জনকণ্ঠের জাওয়াদ ও পাঠশালার রাহাত হামলার শিকার হন। তাদের কেউ কেউ ল্যাব এইড হাসপাতালে, কেউ পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবুর দিকে হঠাৎ করে কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র হাতে তেড়ে এলে তিনি মোবাইল ফোন দ্রুত ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নেন। তারা তাকে ছবি না তুলতে সাবধান করে দেয় ওই যুবকরা।
লাবু বলেন, একজন নারী চিকিৎসক রিকশায় করে যাওয়ার সময় মোবাইল বের করে ছবি তুললে ওই যুবকেরা ফোনটি কেড়ে নিয়ে তাকে নাজেহাল করেন।
এদিকে ধাওয়া খেয়ে হ্যাপি অর্কিড প্লাজার মোড়ে এসে আশ্রয় নেওয়া সাংবাদিকদের উপর ফের হামলা চালাতে আসে ওই যুবকরা। সেখানে কিছুক্ষণ মহড়া দিয়ে আবার ধানমন্ডি দুই নম্বরের দিকে ফিরে যায় তারা।
সাংবাদিকদের পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও এই যুবকদের হামলার শিকার হন।
কিছুক্ষণ পর ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল আসে হ্যাপি অর্কিড প্লাজার সামনে, যিনি ওই এলাকাতেই ছিলেন।
তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনার বিষয়ে কেউ তাদের কাছে অভিযোগ করেননি।
কিরিচ, রড হাতে হামলাকারী এই যুবকরা কারা- জানতে চাইলে তিনি মারুফ বলেন, “আমি কোনো অস্ত্র দেখিনি। আর কোনো সাংবাদিক আমার কাছে কমপ্লেইন করেনি।”
শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়া হলেও এই যুবকদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ ছিল না কেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এখানে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে চলে গেছে, কারা কোন দিকে, এখানে আমরাও বিভ্রান্ত হয়ে গেছি …. যারা আমাদের দিকে ঢিল মেরেছে, শুধু তাদেরকেই ছত্রভঙ্গ করেছি।”
এদিন বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকার উত্তরা ও বনানীতেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়েছিল। ছবি তুলতে কিংবা ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলেওই বাধা দিচ্ছিল তারা।