ব্যাগ কাঁধে ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীরা শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের সনদ পরীক্ষা করা শুরু করে।
এর মধ্যে শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতারা সংহতি প্রকাশ করেন। তবে ঝিগাতলা, ফার্মগেইট, মিরপুরে তাদের উপর ছাত্রলীগ নামধারীরা হামলা চালায় বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।
সকাল থেকে থাকার পর সন্ধ্যার দিকে প্রায় সব স্থান থেকেই সড়ক থেকে সরে যায় আন্দোলনকারীরা।
এদিকে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে ‘সাহস’ নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ ‘কঠোর’ হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের এখন ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
তাদের আন্দোলন থেকে ওঠা ৯টি দাবি পূরণের ঘোষণা দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানানো হলেও শুধু আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বাস না নামানোয় সড়কে শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজি অটোরিকশাই চলাচল করছে।
এসব গাড়ি থামিয়ে চালকদের ও গাড়ির লাইসেন্স দেখতে চাচ্ছিল শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার মিরপুরে সকাল ১০টার পরে ১০ নম্বর গোল চত্বরে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ১ নম্বরের দিকে যায়। ফিরে ওই চত্বরে অবস্থান নিয়ে গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা শুরু করে।
সেখানে থাকা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব দাবি পূরণ না হলে রাস্তা ছাড়ব না।”
১০ নম্বর সেকশনের মতো ৬, ২ ও ১ নম্বর সেকশনেও সড়কে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে অন্য দিনের মতো যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল।
রামপুরা সেতুতে শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সড়কে নামতে চাইলেও তা করতে দেয়নি পুলিশ। সহকারী পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক পূর্ব অফিসের কেউ কথা সাংবাদিকদের সঙ্গে বলতে বলতে চায়নি।
এসময় শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে বোঝাতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।
মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করে।
শান্তিনগর মোড়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। সেখানে ভিকারুননিসা, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের এবং স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে।
ফার্মগেইটেও অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। যানবাহনে শৃঙ্খলার পাশাপাশি পথচারীদের ওভারব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করছিল তারা।
শান্তিনগরে দুটি পুলিশ ভ্যান ও দুজন পুলিশ অফিসারের গাড়িও আটকায় তারা।
দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা।
শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে এগোলে হেলমেট পরা একদল যুবকের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বিকাল পর্যন্ত চলে।
তার আগে বিকাল ৩টার দিকে বিজয়নগর মোড়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একজন মোটর সাইকেল আরোহীর লাইসেন্স পরীক্ষা করতে গেলে তিনি লাইসেন্স না দেখিয়ে চলে যেতে উদ্যত হন। এসময় শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে আরোহী সড়কে পড়ে যান।
বেলা ১টার দিকে ফার্মগেইটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে উঠে যেতে অনুরোধ করতে যান একদল যুবক। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে সড়কে অবস্থান নিয়ে থাকে।
বিকালে তেজতুরি বাজারে তেজগাঁও সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে আলাদা লেইনে চলার অনুরোধ করছিল।
এসময় একদল যুবক এসে তাদের সড়ক থেকে উঠে যেতে নির্দেশ দেয়। তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে বসে পড়ে।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “এলাকার ছাত্রলীগের ছেলেরা আমাদের উপর আক্রমণ করে।”
এসময় পথচারীরা সংঘর্ষের দৃশ্য ভিডিও করতে গেলে সেই যুবক দল তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করে।
বিকাল ৪টার দিকে বংশালের নর্থ সাউথ রোডে ১০ জনের একটি দল গণপরিবহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করে দিচ্ছিলেন। নয়াবাজারের ইংশিল রোডেও বেশ কয়েকজনকে যানবাহনের লেন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। তবে পুরান ঢাকার এদের কারও পরনে স্কুলের পোশাক দেখা যায়নি।