চলে গেলেন সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন

বাংলাদেশে অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকতার অন্যতম দিকপাল এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন আর নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2018, 01:38 PM
Updated : 1 August 2018, 05:26 PM

ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে বেশ কিছু দিন রোগ ভোগের পর বুধবার ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তার।

১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম অর্থনীতি বিষয়ক ইংরেজি দৈনিক হিসেবে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যাত্রার শুরু থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে কাজ শুরুর পর কয়েক দশকের সাংবাদিকতা জীবনে বাংলাদেশ অবজারভার, ডেইলি স্টার, নিউ নেশন, ইউএনবি, ঢাকা কুরিয়ারে কাজ করেছেন তিনি।

মোয়াজ্জেম হোসেনের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে মোয়াজ্জেম হোসেনের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সকালে মরদেহ নেওয়া হবে তার কর্মস্থল ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, বাদ জোহর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন; সমবেদনা জানিয়েছেন শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রবীণ এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বলেছেন, “মোয়াজ্জেম হোসেন সংবাদ অঙ্গনে একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠ। সত্য প্রকাশে তিনি ছিলেন সর্বদাই নির্ভীক। তার মৃত্যুতে এ অঙ্গনে যে ক্ষতি হল, তা পূরণ হওয়ার নয়।”

স্বজনরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরেও নেওয়া হয়েছিল তাকে। সম্প্রতি দেশে ফিরিয়ে এনে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় তার মৃত্যু হয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন

ফেনীর সন্তান মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৬৭ সালের স্নাতক এবং পরের বছর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

এরপর পাকিস্তানের করাচিতে হাবিব ব্যাংকে অফিসার পদে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি; কিন্তু পরে পেশা বদলে চলে আসেন সাংবাদিকতায়।

১৯৭০ সালে পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন মোয়াজ্জেম হোসেন, পরে বাংলাদেশ অবজারভারে বিশেষ সংবাদদাতা হয়েছিলেন তিনি।

কয়েক দশক ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হলিডে’তে বিশ্লেষণধর্মী অর্থনৈতিক প্রতিবেদন লেখেন তিনি। কাজ করেন নিউ নেশন, ইউএনবি, ঢাকা কুরিয়ারে।

১৯৯১ সালে এস এম আলীর সম্পাদনায় দি ডেইলি স্টার প্রকাশ হলে এর ‘বিজনেস এডিটর’ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

১৯৯৩ সালে দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস প্রকাশ শুরু করেন তিনি। ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশনস লিমিটেডের (আইপিএল) মালিকানায় ইংরেজি এই দৈনিকটি প্রকাশিত হচ্ছে। আইপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরও দায়িত্বও পালন করছিলেন তিনি।

মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) এবং ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।

তিনি জনতা ব্যাংক ও ন্যাশনাল কর্মার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেরও সদস্য ছিলেন।

অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

তার মৃত্যুতে ইআরএফ ও জাতীয় প্রেস ক্লাব শোক প্রকাশ করেছে। শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছে বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, বিএফইউজের অন্য অংশের সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদ।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক শোক বার্তায় সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ এলামনাই এসোসিয়েশন ‘ডুয়েডা’র সহসভাপতি ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তার মৃত্যুতে ’ডুয়েডা’র পক্ষ থেকে সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শোক জানিয়েছেন।

শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক।