লাইসেন্স নেই, পুলিশের গাড়িও আটকে দিল ছাত্ররা

গত চার দিন ধরে রাজধানীর রাজপথে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে থাকা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নেমেছে পুলিশের ভূমিকায়, লাইসেন্স না থাকায় তাদের হাতে পুলিশের গাড়িও আটকে গেছে।

লিটন হায়দারও কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2018, 07:57 AM
Updated : 1 August 2018, 05:20 PM

জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় গত রোববার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ প্রতিদিনই বিস্তৃতি পাচ্ছে।

তাদের বিক্ষোভ, মিছিল আর অবরোধের কারণে বুধবার সকাল থেকে রাজধানী কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। 

আমাদের প্রতিবেদকরা জানান, ফার্মগেইট, শাহবাগ ও সায়েন্স ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের সামনেই যানবাহন থামিয়ে চালকদের কাছে লাইসেন্স দেখতে চাইছে। লাইসেন্স দেখাতে না পারলে  চালকদের কাছ থেকে চাবি রেখে দেওয়া হচ্ছে। ফলে গাড়ি পড়ে থাকছে রাস্তায়।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ধানমণ্ডিতে হারুণ আই হসপিটালের সামনে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের একটি গাড়িও শিক্ষার্থীদের লাইসেন্স পরীক্ষায় আটকে যায়।  

ছবি: লিটন হায়দার

ছবি: লিটন হায়দার

পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে পুলিশের ওই পিকআপের পথ আগলে থাকা ইউনিফর্ম পরিহিত এক শিক্ষার্থী জানায়, তারা লাইসেন্স দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পুলিশের গাড়ির চালক তা দেখাতে পারেনি। এ গাড়ি তারা যেতে দেবে না।

ওই গাড়ির চালকের আসনে থাকা পুলিশ কনস্টেবল অরবিন্দ সমাদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমরা সরকারি চাকরি করি। লাইসেন্স না দেখে তো আর চাকরি দেয়নি।”

তাহলে লাইসেন্স দেখাতে পারেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,  “সরকারি গাড়ি, আমাদের গাড়িতে করে খাবার নেওয়া হয়। কাজের সময় আমরা লাইসেন্স নিয়ে বের হই না। কাগজ অফিসে থাকে।”

ছবি: কাজী মোবারক হোসেন

প্রায় আধা ঘণ্টা ওই জায়গায় আটকে থাকার পর বাড়তি পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ওই পিকআপটি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে সব লাইসেন্সবিহীন চালকের ভাগ্য এতটা ভালো ছিল না। অনেককেই গাড়ির চাবি ফেরত পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে কাকুতি মিনতি করতে দেখা যায়।

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “ লাইসেন্স না থাকার পরও এরা গাড়ি চালায়। এদের কারণে আমাদের ভাইয়েরা রাস্তায় মারা যাচ্ছে। লাইসেন্স ছাড়া কোনো গাড়ি রাস্তায় চলবে না।”

বিকাল ৪টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে কিছু শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার আবার আসার কথা বলে ভিজতে ভিজতে সায়েন্স ল্যাব মোড় ছেড়ে যায়। তখন কিছু কিছু যানবাহন চলাচলও শুরু হয়।

ছবি: লিটন হায়দার

কিন্তু ওই সময়ে ইউনিফর্ম পরা আরও কিছু কিশোর-তরুণ সেখানে হাজির হয়ে গাড়ি আটকে লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করে।

এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ির চালক লাইসেন্স দেখাতে না পাড়ায় দীর্ঘ সময় তার গাড়ি সেখানে আটকে রাখা হয়। গাড়ির চালক শহীদুল ইসলাম ছাড়াও মোহম্মদপুর বিআরটিসির ডিপো ম্যানেজার ভেতরে বসা ছিলেন।

পরে চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার লাইসেন্স বেশ কিছু দিন আগে ট্রাফিক পুলিশ আটকে রেখে মামলা দেয়। তার কাছে এখন কেইস স্লিপ ছাড়া কিছু নেই।

বিক্ষোভকারীরা এ সময় বলে, সরকারি গাড়ি লাইসেন্স ছাড়া চালানো ‘সবচেয়ে বড় অপরাধ’। এর বিহিত হতেই হবে।