ইভিএমেই ‘মজা’

সিলেটের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আম্বরখানা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের দুটি কেন্দ্রে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের শেষ সময়ও ছিল ভোটারদের সরব উপস্থিতি।

ওবায়দুর মাসুম সিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2018, 04:08 PM
Updated : 30 July 2018, 04:08 PM

ভোট দেওয়ার সহজ এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়ে দুই কেন্দ্রের বেশ কয়েকজন ভোটার বলেছেন, ব্যালটে সিল মারার চেয়ে যন্ত্রে ভোট দিতেই ‘মজা’ পেয়েছেন তারা।

এ দুটি কেন্দ্রে দুই হাজার ৫৫৬ জন পুরুষ এবং এক হাজার ৯৫৭ জন নারী ভোটার ছিলেন।

সোমবার অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্য ১৩২টি কেন্দ্র থেকে এই কেন্দ্রের চিত্র ছিল একটু ব্যতিক্রম।

কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, ভোটাররা আসার পর তাদের স্মার্ট কার্ড দেখছেন পোলিং কর্মকর্তারা। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পোলিং কর্মকর্তা ভোটারের আঙ্গুলে কালি লাগিয়ে দিচ্ছেন। গোপন কক্ষে যাওয়ার আগে আবার বলে দিচ্ছেন, কীভাবে ভোট দিতে হবে।

কোনো ভোটার ভুল করলে সামনে থাকা কম্পিউটারে তা দেখতে পাচ্ছিলেন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। সেখান থেকেই তিনি নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, কীভাবে ভোটটি সফলভাবে দেওয়া যাবে।

ইভিএমে ভোট দিতে ভোটারকে সহায়তার এই চিত্র বরিশালের। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

নির্বাচনের আগের দিন রোববার আম্বরখানা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ইভিএম যন্ত্রপাতি নেওয়া হয়। হাউজিং এস্টেট, মনিপুরীপাড়া এবং দত্তপাড়ার ভোটাররা এই দুটি কেন্দ্রে ভোট দেন।

হাউজিং আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর সড়কের বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া ভোট দিয়ে কেন্দ্রের পাশের সড়কে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোটের এই পদ্ধতিটি তার ‘খুবই পছন্দ’ হয়েছে।

“সিলেটের অনেক কেন্দ্রে আজ গণ্ডগোলের কথা শুনছি। কিন্তু এইখানে কোনো গণ্ডগোল নাই। কেউ চাইলেও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে পারত না।”

পাশে থাকা লুৎফর রহমান জানালেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তিনি ‘দুঃখ’ পেয়েছেন।

ইভিএম কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেওয়ার পর তার দাবি, এরপর থেকে ইভিএমে ভোট নেওয়া হোক।

“সিলেটে সব সময় শান্তিপূর্ণ বুট (ভোট) অয়। এইবার এইসব দেইখখা দুখখ লাগছে। এইগুলা খারাপ হইছে। এর পরের বার মেশিনে বুট নিলে এই সমস্যা হইত না।”

নারীদের বুথে ভোট দেওয়ার পর বেরিয়ে এসে চৌধুরী শাহিদা সাব্বির আফসানা বলেন, “ইভিএমে ভোট নেওয়ায় ভোট দেওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হয়েছে। ভোট দিতে মজাই লেগেছে।”

আরেক নারী ভোটার সুলতানা রাজিয়াও জানালেন তার ইভিএম অভিজ্ঞতার কথা।  

“দেশ অনেক এগিয়েছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন হাতে কালি মেখে ভোট দেওয়ার সময় নাই। এইভাবে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে ডিজিটালের দিকে আরও এগিয়ে গেলাম। এভাবে ভোটেও স্বচ্ছতা আসবে।“

সিলেটের দুটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়

 

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট  ‘ভালোই’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান।

“আমাদের এখানে ভোট খুবই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোনও গোলমাল হয়নি। এখনও সঠিক সংখ্যা বলতে পারব না। তবে পঞ্চাশ থেকে ষাট ভাগের মতো ভোট কাস্ট হয়েছে এখানে।”

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হওয়া দুই কেন্দ্রের সম্মিলিত ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।

এ দুটি কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকে আরিফুল হক তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বদর উদ্দীন আহমদ কামরানের চেয়ে ৭৪২ ভোট বেশ পান।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের আম্বরখানা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুটি কেন্দ্রে ধানের শীষ এক হাজার ৩০৮ ভোট পেয়েছে। নৌকা প্রতীক পেয়েছে ৫৬৬ ভোট।

১৩ নম্বর কেন্দ্রে (আম্বরখানা স্কুল এ্যান্ড কলেজ-ভবন ৫) নৌকা প্রতীকে কামরান পেয়েছেন ৩৫১ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকে আরিফুল পেয়েছেন ৭৫১ ভোট।

১৪ নম্বর কেন্দ্রে (আম্বরখানা স্কুল এ্যান্ড কলেজ-ভবন ৩) নৌকা পেয়েছে ২১৫ ভোট। আর ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছে ৫৫৭ ভোট।

এখানে নারীদের কেন্দ্রে ধানের শীষ ৫৫৭ ভোট, নৌকা ২১৫ ভোট পেয়েছে। নারীদের কেন্দ্রে টেবিল ঘড়ি ৭৬, হাতপাখা ১১, মই ৪২, হরিণ ১১, বাস ১৯ ভোট পেয়েছে।

পুরুষদের কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক ৩৫১ এবং ধানের শীষ ৭৫১ ভোট পেয়েছে। এছাড়া টেবিল ঘড়ি ১২৪, হাতপাখা ২০, মই ২৭, হরিণ ৬ এবং বাস প্রতীক ৩ ভোট পেয়েছে।

সোমবার বিকাল ৪টায় ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ইভিএমের কেন্দ্রগুলোতে ফল ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা।

১৩ নম্বর  কেন্দ্রের ২৫৫৬ ভোটারের মধ্যে ১৬০০ জন ভোট দিয়েছেন; ভোটের হার ৬২.৫৯ শতাংশ।

১৪ নম্বর কেন্দ্রের ১৯৫৭ ভোটারের মধ্যে ৯৫৪ জন ভোট দিয়েছেন; ভোটের হার ৪৮.৭৪ শতাংশ।

এর আগে ২০১৩ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মদনমোহন কলেজ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।