জাল ভোট-সংঘর্ষ: সিলেটে দুই কেন্দ্র স্থগিত, ম্যাজিস্ট্রেট আহত

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত ভোট জালিয়াতির অভিযোগের পাশাপাশি কয়েকটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে; এসব ঘটনায় একজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ চারজন আহত হয়েছেন।

ওবায়দুর মাসুমও মঞ্জুর আহমদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2018, 09:42 AM
Updated : 30 July 2018, 12:54 PM

এর মধ্যে দুটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গুলিতে তিনজন আহত হয়েছেন। আরেক কেন্দ্রে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট।

বিক্ষিপ্ত গোলযোগের কারণে আরও কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহন বিঘ্নিত হওয়ার খবর এসেছে সোয়া তিন লাখ ভোটারের এই নগরী থেকে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরি জামান জানান, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান বেলা দেড়টার দিকে কুমারপাড়া এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল।

“এ সময় তার গাড়িতে ঢিল পড়লে গ্লাস ভেঙে মতিউর আহত হন। একটি ঢিল তার নাকে লাগে। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”

আহত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুমারপাড়া পয়েন্টে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে আমি মাঝখানে পড়ে যাই। একটি ঢিল আমার গাড়ির কাচে লেগে ভেঙে যায়। কাচের টুকরো এসে আমার গায়ে লেগেছে। একটু কেটে গেছে। আমি আবার মাঠে ফিরেছি।”

এর আগে বেলা ১টার দিকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বখতিয়ার বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী ঠেলাগাড়ি  প্রতীকের এসএম শওকত আমীন তৌহিদ ও ঘুড়ি প্রতীকের দিনার খান হাসুর সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

সেখানে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, “তারা ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছিল। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ছুড়লে তিনজন আহত হন।”

আহতদের কারো নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি আতাউল গনি ওসমানী।

তিনি বলেন, “তারা দল বেঁধে এখানে এসে তিনটি কক্ষে ঢুকে পড়ে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে পুলিশের দিকে অস্ত্র তাক করে। পরে পুলিশ গুলি করে।”

বখতিয়ার বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, “প্রায় এক ঘণ্টা ভোট বন্ধ ছিল। আমাকেও বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আটকে দিয়েছিল। ব্যালট পেপার বা কোনোকিছু নিতে পারে নাই।”

এদিকে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ পেয়ে বেলা ২টার দিকে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ গাজী সৈয়দ বোরহান উদ্দিন মাদ্রাসা (১১৬ নম্বর কেন্দ্র) এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৩৪ নম্বর) কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা আলিমুজ্জামান জানান, বোরহান উদ্দিন মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ হাজার ২ ২১ জন। আর হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ হাজার ৫৬৬ জন।

এর আগে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মিরাবাজারের মডেল হাই স্কুল কেন্দ্রে প্রায় ৪৫ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে।

বেলা ১১টার দিকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল এবং সাজেদ আহমেদ চৌধুরী বাপনের সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়।

ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে উজ্জ্বল বলেন, “রেডিও এবং ঘুড়ি- দুই প্রার্থীর লোকজন সকাল থেকে ব্যালট পেপারে বাক্সে সিল মেরে বাক্সে ভরেছে।”

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কাজী আশিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেলা পৌনে ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ আবারও শুরু হয়েছে।

মিরাবাজারের মডেল স্কুল কেন্দ্রে গোলযোগ চলার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দীন আহম্মদ আহমেদ কামরানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ১২টার দিকে সাদিপুরের সৈয়দ হাতেম আলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম।

ততক্ষণ পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের ১ নম্বর কক্ষে ১৩৪, ২ নম্বর কেন্দ্রে ৮৯, ৩ নম্বর কেন্দ্রে ১২২ ভোট, ৪ নম্বর কেন্দ্রে ১৩৪ ভোট এবং ৫ নম্বর কেন্দ্রে ১৭২টি ভোট পড়ার তথ্য দেন দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তা। এসব কেন্দ্রে বিএনপির কোনো এজেন্টকে দেখা যায়নি।

২০ নম্বর ওয়ার্ডের নবীন চন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল দশটার পর থেকেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

২১ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটারদের অনেকে অভিযোগ করেন, ভোট দিতে গেলে তাদের বলা হয়েছে ‘ভোট দেওয়া হয়ে গেছে’।

মেয়র পদের ব্যালট পেপার দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন এ কেন্দ্রের ভোটারদের কেউ কেউ।

বেলা সোয়া ২টার দিকে উপশহর এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে কোনো ভোটার পাওয়া যায়নি। বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্টও সেখানে ছিলেন না।

পরে কেন্দ্রের ভেতরে একটি টেবিলের ওপর ব্যালট পেপারের একটি বান্ডিল পড়ে থাকতে দেখা যায়। বান্ডিলের সব ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারা। দুয়েকটা ব্যালটে ধানের শীষেও সিল মারা দেখা যায়।

এ বিষয়ে কেন্দ্রে কর্মরত পোলিং অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সৈয়দুর রহমানের কক্ষে গিয়ে তার টেবিলেও সিলমারা ব্যালট পেপারের বান্ডিল দেখা যায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সকাল থেকে ভালোই ভোট হচ্ছিল। ১২টার দিকে হঠাৎ করে একদল লোক আছে অতর্কিতে হামলা করে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স নিয়ে যায়। ঘণ্টা দেড়েক পর আবার দিয়ে গেছে।”