সেই সঙ্গে তাকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার না করতেও নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীর হাই কোর্ট বেঞ্চ।
যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য উড়োজাহাজে ওঠার পর আটকে দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমরানের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম আমীর উল ইসলাম ও তানিয়া আমীর। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুন করীম।
ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত ইমরান এইচ সরকারকে বিদেশ যেতে এবং ফিরতে বাধা না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাকে হয়রানি না করতেও নির্দেশ দিয়েছেন।”
তানিয়া আমীর সাংবাদিকদের বলেন, “কখনোই এমন অফলোডিংয়ের ঘটনা আমরা পাইনি। ইমিগ্রেশন অনেক সময় বন্ধ করে দেয় এবং আদালতে এ নিয়ে অনেক সময় চ্যালেঞ্জও করেছি এর আগে। কিন্তু ফ্লাইটে ওঠার পর ডিপারটেড হওয়ার পর তাকে সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসার ঘটনা নজিরবিহীন। কারণ তখন সে আন্তর্জাতিক টেরিটরিতে চলে গেছেন, কারণ তখন সে অলরেডি ডিপারটেড।”
তানিয়া বলেন, সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো নাগরিক যে কোনো সময় বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যেতে পারবেন, আবার বিদেশ থেকে আসতেও পারবেন। এই মৌলিক অধিকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য। এটাতে বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার কারো নাই। কারো বিরুদ্ধে মামলা থাকলে বা তিনি জামিনে না থাকেন ভিন্ন কথা।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুন করীম বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত জানতে চেয়েছিল ইমরান এইচ সরকারের বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো আদালত থেকে কোনো শর্ত বা নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা।
“আমরা খোঁজ নিয়েছি, তার ডিপারচারের ওপর ইন্টেলিজেন্সের একটা নেগেটিভ রিপোর্ট আছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। অবশ্য সে মামলায় তিনি জামিনে আছেন। তবে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আদালত থেকে কোনো ধরনের শর্ত বা নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে সংবিধান অনুযায়ী তার বিদেশে যাওয়ার অধিকার আছে।”
বিদেশ যেতে বা বিদেশ থেকে ফিরতে ইমরানকে কোনো ধরনের বাধা না দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেছে আদালত।
স্বরাষ্ট্র সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশের বিশেষ শাখার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আমন্ত্রণে চার সপ্তাহের সফরে সে দেশে যাওয়ার কথা ছিল ইমরানের। শুক্রবার সন্ধ্যায় এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তার রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চেক ইন ও ইমিগ্রেশনের সব কাজ শেষ করার পরও তাকে সেদিন বিমান থেকে নামিয়ে আনা হয় বলে ইমরানের অভিযোগ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেদিন তিনি বলেন, “বিমান ছাড়ার মিনিট দশেক আগে আমাকে বলা হয়, ‘উপরের নির্দেশ আছে, আপনি যেতে পারবেন না’। কারণ জিজ্ঞাসা করলে পুলিশের ওই কর্মকর্তা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ।“
বিদেশ যেতে বাধা দেওয়ার ওই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে এই রিট আবেদনটি করেন ইমরান। সেখানে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার নির্দেশনাও চাওয়া হয়।
আদেশের পর তিনি সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের বলেন, ইন্টারন্যাশনল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামে (আইভিএলপি) যোগ দিতে সোমবার রাতেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে তা গণজাগরণ হিসেবে পরিচিতি পায়। আন্দোলন পরিচালনায় থাকা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হন রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইমরান।
ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশ-বিদেশে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। তবে এরপর নানা সময়ে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা, কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমে ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হন তিনি।
শাহবাগে বিক্ষোভের স্লোগানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন একজন ছাত্রলীগ নেতা। পরে ওই মামলা হাই কোর্ট খারিজ করে দেয় বলে জানিয়েছেন ইমরান।
সর্বশেষ গত ৬ জুন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে শাহবাগে সমাবেশ করতে গেলে র্যাব তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়।